পেঁয়াজের ভান্ডার খ্যাত পাবনায় নতুন পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। তবে দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন পেঁয়াজ চাষিরা। গত বছর পেঁয়াজ আবাদে লাভ বেশি হওয়াতে এবার আবাদ বেড়েছে প্রায় ১০ শতাংশ।
চাষিরা বলছেন, বাজারে চাহিদা না বাড়ায় দাম পড়ে যাচ্ছে। তাই উৎপাদন খরচ ওঠা নিয়ে তাদের শঙ্কা রয়ে গেছে।জেলার কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষে এবার প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ হয়েছে ৫০ টাকার বেশি। আর হালি পেঁয়াজে খরচ পড়েছে প্রায় ৪৫ টাকা। মুড়িকাটা ও হালি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ পড়েছে যথাক্রমে ৪১ ও ৩৮ টাকা। তবে পাইকারি বাজারে মাত্র ১৩ থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে মুড়িকাটা পেঁয়াজ এবং ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি দরে হালি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
চাষিরা জানান, তারা আশায় ছিলেন হালি পেঁয়াজের হয়তো ভালো দাম পাবেন। কিন্তু হালি পেঁয়াজেরও ভালো দাম মিলছে না। বরং পেঁয়াজ ক্ষেতগুলো আগা মরা রোগে আক্রান্ত হওয়ায় পেঁয়াজের গুটি খুব একটা বড় হয়নি। এ অবস্থায় ফলন কমে যেতে পারে বলে তাদের শঙ্কা আছে।
সাঁথিয়া উপজেলার পুন্ডুরিয়া গ্রামের কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর পেঁয়াজের ভালো দাম দেখে এবার একটু বেশি জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। কিন্তু বাজারে এমনিতেই পেঁয়াজের দাম নেই। এর ওপর পেঁয়াজের আগা মরা রোগ।
সুজানগর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান বলেন, এ বছর প্রায় ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করেছি। এর মধ্যে ৩০ বিঘা জমি লিজ নেওয়া। এক কেজি পেঁয়াজের গড় উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় ৪০ টাকা। গত বছর শুরুতেই এক মন পেঁয়াজ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বছর জুড়েই বাজার ছিল ভালো। গত বছরের তুলনায় এবার নতুন পেঁয়াজের দাম অর্ধেকেরও কম। এ কারণে এবার মোটা অংকের টাকা লোকসান গুনতে হতে পারে।
পাবনা সদর উপজেলার পুষ্পপাড়া হাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম বলেন, গত সপ্তাহে হাটে নতুন পেঁয়াজ প্রতি মণ ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু পাইকারি বাজারে সরবরাহ বাড়াতে পেঁয়াজের দাম কমে যাচ্ছে।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, পাবনায় এ বছর ৫৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের আশা করছে জেলা কৃষিবিভাগ।
কৃষিবিভাগ জানায়, দেশের প্রায় ৭০ ভাগ পেঁয়াজ উৎপাদন হয় পাবনাতে। গত ২ বছর প্রত্যাশার চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় অনেক কৃষক ঋণ নিয়ে এবার পেঁয়াজের আবাদ করেছেন।
পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক রোকনুজ্জামান বলেন, দাম কমলেও কৃষকদের হতাশ হওয়ার কারণ নেই। এখন পুরোদমে পেঁয়াজ তোলা হচ্ছে। এজন্য বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়েছে। তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ বিক্রি না করে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন তিনি।