গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মামলা হামলা থেকে বাঁচতে অনেকেই পালিয়ে বা আত্মগোপনে চলে যায়। সেই সুবাদে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের পদ স্থগিত করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অনুপস্থিত সেখানে প্যানেল চেয়ারম্যান নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। তারই ধারাবাহিকতায় সোনারগাঁয়ের বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারের অনুপস্থিতিতে একই ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল্লাহ আল মামুন প্যানেল চেয়ারম্যান হওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
জানা গেছে, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল্লাহ আল মামুন নারায়ণগঞ্জ ৩ আসনের সাবেক এমপি লিয়াকত হোসেন খোকার আর্শীবাদপুষ্ট হয়ে সদস্য পদ নেন নারায়ণগঞ্জ জেলা জাতীয় পার্টির। সেই সাথে এমপি খোকার পরাজয়ের পরে সোনারগাঁয়ের রাজনীতিতে দৃশ্যপট ও পরিবর্তন হতে থাকে।
আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত এমপি হওয়ার পরে কায়সার হাসনাত এর হাতে নৌকার ক্রেস্ট তুলে দিয়ে হয়ে যান কায়সার হাসনাত এর ঘনিষ্ঠ। বিগত সময়ে নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সিনিয়র সহ সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাসুদুর রহমান মাসুম এর নাম ভাঙিয়ে এলাকায় জমি দখলের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে।
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সোনারগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের যে কয়েকটি গ্রুপ মাঠে ছাত্রদের দমনে সক্রিয় ভুমিকা রেখেছে তাদের অর্থের যোগানদাতা ছিলেন এই মামুন মেম্বার। তার দেয়া অর্থ ছাত্র আন্দোলনে আন্দোলনকারীদের দমনে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ। যার ফলে ৩টি হত্যা মামলার আসামী হয় এই মামুন মেম্বার। এর আগে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে সে ও তার বাহিনী ভূমিদস্যুতা করতো।
প্রথমবারের মতো মেম্বার হয়েই হয়েছেন অঢেল সম্পদের মালিক। আমান গ্রুপ থেকে ভূমিদস্যুতা করে কামিয়েছেন অঢেল টাকা-পয়সা। সেই টাকা দিয়ে বিভিন্ন টেবিল, স্থানীয় মেম্বার ও দলীয় নেতাদের ম্যানেজ করে হতে চাচ্ছেন বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান।
মামুন মেম্বার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান হবে একথা জানাজানি হলে ছাত্রজনতার মাঝে চড়ম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা জানান বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নে কেউ যদি মামুন মেম্বারকে পুনর্বাসিত করে তাহলে তা হবে ছাত্রজনতার রক্তের সাথে বেইমানি করা। মামুন মেম্বার প্যানেল চেয়ারম্যান হলে আবারও রাজপথ দখল নিয়ে আন্দোলনে নামবে বলে হুশিয়ারি দেয় তারা।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারের সাথে বিরোধের জের ধরে পরিষদের মেম্বারদের নিয়ে আগে থেকেই একটা সিন্ডিকেট গড়ে তোলে মামুন মেম্বার। এখন চেয়ারম্যান আল আমিন সরকারের অনুপস্থিতিতে সেই সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে মামুন মেম্বার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন মেম্বার বাংলাদেশ সময়কে জানান, বিএনপির কিছু নেতা মামুন মেম্বার এর সহযোগী হয়ে কাজ করছে। তারা মামুন মেম্বারকে যেকোনো কিছুর বিনিময়ে প্যানেল চেয়ারম্যান বানাবে বলে আশ্বাস দেন। এর আগে প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছে নবী হোসেন মেম্বার। তার নামে মামলা থাকায় সে প্যানেল চেয়ারম্যান হতে পারছে না। কিন্তু মামুন মেম্বার ৩ টি হত্যা মামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামী হওয়ার পরেও কীভাবে প্যানেল চেয়ারম্যান হয় মামুন!
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন ২নং ওয়ার্ড মেম্বার আব্দুল্লাহ আল মামুনকে একাধিকবার তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নাম্বারে কল দেওয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম সরকার বলেন, এই বিষয়টি আপনার মাধ্যমে আমার দৃষ্টিতে এসেছে। বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়ন বিএনপির কেউ যদি এখানে জড়িত থাকে তাহলে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
প্যানেল চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করা নবী হোসেন মেম্বারের মুঠোফোন নাম্বারে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।