ঢাকা ০৪:১৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
টাইম সাময়িকীর উদীয়মান ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম রাষ্ট্র সংস্কার: ৬ কমিশনের ৫টির পূর্ণাঙ্গ গেজেট প্রকাশ এইউবির অধ্যাপক থেকে সোমালিয়ার দারুসসালাম ইউনিভার্সিটির উপাচার্য; সংবর্ধনা পেলেন ড. আসিফ মিজান অনির্দিষ্টকালের জন্য সাজেক ভ্রমণে না যাওয়ার পরামর্শ দিল জেলা প্রশাসন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার গ্রেপ্তার দাওয়াত দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ শ্রীপুরে পোশাক শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা করে পালিয়েছে নরসুন্দর গাজীপুরে আজও ৮ পোশাক কারখানা বন্ধ লেবাননে ইসরায়েলি বিমান হামলায় মার্কিন নাগরিক নিহত বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের দুর্নীতির তথ্য জানানো যাবে ই-মেইলের মাধ্যমে
সংবাদ শিরোনামঃ
তাকসিম সিন্ডিকেটের সুবিধাভোগীরা এখনো বহাল তবিয়তে শ্রীমঙ্গলে ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর চাল আত্মসাতের অভিযোগ পাবনায় সাবেক ২ মেয়র ও কাউন্সিলরসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা মাদকের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির শাহরিয়ার কবির গ্রেপ্তার মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা তার মালিকানা নগদ ডিস্ট্রিবিউশন এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে কারাগার থেকে পালানো যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে প্রবাসীর স্ত্রীর রহস্যজনক মৃত্যু অপহরণের জন্যই ঢাকায় আসে চক্রটি, দাবি করে ১০ লাখ টাকা চালু না হতেই বন্ধ ঠাকুরগাঁও চিনিকলের আখমাড়াই

মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা তার মালিকানা নগদ ডিস্ট্রিবিউশন এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০৩:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১৮৯ বার পড়া হয়েছে

পর্ব- ১

ফরিদ উদ্দিন ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকের এপিএস, তাতেই চলে আসে তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। ফরিদের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের নামে আয়োজন ও কেনাকাটা করত কর্পোরেশন। কেনাকাটার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন। যত কমিশন ও দুর্নীতির টাকা সবই নিতেন তিনি। ফরিদ উদ্দিনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্লিন’। এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে খাল পরিস্কারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে কাজের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে সিটি কর্পোরেশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। কর্পোরেশনের ফান্ড ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কর্পোরেশন। আর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায় তার এই অবৈধ টাকা তার এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক নগদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পেট বোতল রিসাইকেল ফ্যাক্টরী করেছে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে। রাজধানীতে তার নামে বেনামে প্রায় চারটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দামী গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, প্রোপাইটর- ফরিদ উদ্দিন, পিতা- আঃ হামিদ, মাতা-দিলারা হামিদ। ঠিকানাঃ হোল্ডিংঃ ২৩/১৩এ, ২৩বি , খিলজী রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাঃ এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সেবা হাউজ, ঘ/অ, রোড- ১৭, গুলশান- ২, টিআইএন নাম্বারঃ ২৬২৫২৯৬৭৩৬৭৯, ট্রেড লাইসেন্স নাম্বারঃ ঞজঅউ/উঘঈঈ/১১১৭৭৭/২০২২, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারঃ ৫৯৮৩৮০৩০৪৯। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাঁর এক ভাই পরিচালনা করছে। জানা যায় তার এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দুইটি ভুয়া ছিলো। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই স্কাই ট্রাভেলস, হাউজ২৫, ৪র্থ তলা, মেইন এভিনিউ, ব্লক- এ, বসুন্ধরা, ভাটারা, ঢাকা এই ঠিকানার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে তিনটি বিমানের টিকিট কিনে ১৯ আগস্ট এমিরাটস এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে বিকাল ৩ঃ ৪৫ মিনিটে সে দুবাই হয়ে আমেরিকা পালিয়ে যায়। তার সাথে তার ছিলো স্ত্রী মাকনুনা রহমান ও তার কন্যা নুর ইসাবেলা, মাকসুরাত। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন। মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে নাটের গুরু ছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ব্যয় বাড়াতে ভুয়া ভাউচার তৈরি করা হতো। এসব প্রোগ্রামের টাকা কয়েক গুণ বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে যান। তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শুধু প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখিয়েছে ৪৯ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ টাকা। ওই বছর ২২ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে খরচ দেখানো হয় ৪০ লাখ ৩০ হাজার ৬৮১ টাকা। একই বছরের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস ও ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বনানী কবরস্থানে যান শেখ হাসিনা। এই প্রোগ্রাম দু’টির খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার করে। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এরিয়া ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত কাজ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ২০২৩ সালে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সপরিবারে মুন্সীগঞ্জে বার্ষিক বনভোজনে যান। ৬ ও ৭ জানুয়ারি দুই দিনের জন্য সিরাজদীখানের ঢালিস আম্বার নিবাস রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন তারা। যাতায়াতের জন্য নেওয়া হয় বিশেষ এসি বাস। সন্ধ্যায় আয়াজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ফি। ওই বনভোজনের মধ্যেই প্রথা ভেঙে প্রথমবার ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত হয় ডিএনসিসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড সভা। বনভোজন ও বোর্ড সভার জন্য ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ টাকা খরচ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে। শুধু এই বনভোজনে নয়, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, জেলহত্যা দিবস, মেট্রোরেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয়ের পুরোটাই দেখানো হয়েছে সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন খাত থেকে। সংস্থাটি এসব খাতে সর্বমোট ব্যয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ২২৬ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করতেন। ২০২২ সালের শোক দিবসের খরচ প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচে ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। জেলহত্যা দিবসে প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই দুই অনুষ্ঠানের খরচের বিষয় একই হলেও টাকার অঙ্ক ভিন্ন। জানা গেছে, জেলহত্যা দিবসের সময় এপিএস ফরিদ দেশের বাইরে ছিলেন। সেজন্য মূল খরচটা এখানে এসেছে। কিন্তু তিনি দেশে থাকায় শোক দিবস, বনভোজন, মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খরচের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব অনুষ্ঠানে ভুয়া বাউচার বানিয়ে প্রোগ্রামের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করেছেন। এসব প্রোগ্রাম থেকে ভুয়া ভাউচারে হাতিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। শুধু এসব অনুষ্ঠানে নয়, ২০২১ সালে ২৩ অক্টোবর ঠিকানা রিসোর্টে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ওই সভায় খরচ হয়েছে ৭-৮ লাখ টাকা। কিন্তু আতিকের এপিএস ফরিদ উদ্দিনসহ একটি সিন্ডিকেট ২৯ লাখ টাকা বিল দেখিয়েছে। এর বাইরে প্রতি বছর নানা প্রোগ্রাম ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি। যার প্রতিটি সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে ব্যয় দেখানো হতো। এই বিভাগের প্রধানকে চাপ প্রয়োগ করে ভুয়া ভাউচারে সই করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ফরিদ।

জনপ্রিয় সংবাদ

টাইম সাময়িকীর উদীয়মান ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম

মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা তার মালিকানা নগদ ডিস্ট্রিবিউশন এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে

আপডেট সময় ০৩:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফরিদ উদ্দিন ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকের এপিএস, তাতেই চলে আসে তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। ফরিদের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের নামে আয়োজন ও কেনাকাটা করত কর্পোরেশন। কেনাকাটার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন। যত কমিশন ও দুর্নীতির টাকা সবই নিতেন তিনি। ফরিদ উদ্দিনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্লিন’। এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে খাল পরিস্কারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে কাজের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে সিটি কর্পোরেশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। কর্পোরেশনের ফান্ড ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কর্পোরেশন। আর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায় তার এই অবৈধ টাকা তার এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক নগদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পেট বোতল রিসাইকেল ফ্যাক্টরী করেছে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে। রাজধানীতে তার নামে বেনামে প্রায় চারটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দামী গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, প্রোপাইটর- ফরিদ উদ্দিন, পিতা- আঃ হামিদ, মাতা-দিলারা হামিদ। ঠিকানাঃ হোল্ডিংঃ ২৩/১৩এ, ২৩বি , খিলজী রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাঃ এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সেবা হাউজ, ঘ/অ, রোড- ১৭, গুলশান- ২, টিআইএন নাম্বারঃ ২৬২৫২৯৬৭৩৬৭৯, ট্রেড লাইসেন্স নাম্বারঃ ঞজঅউ/উঘঈঈ/১১১৭৭৭/২০২২, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারঃ ৫৯৮৩৮০৩০৪৯। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাঁর এক ভাই পরিচালনা করছে। জানা যায় তার এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দুইটি ভুয়া ছিলো। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই স্কাই ট্রাভেলস, হাউজ২৫, ৪র্থ তলা, মেইন এভিনিউ, ব্লক- এ, বসুন্ধরা, ভাটারা, ঢাকা এই ঠিকানার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে তিনটি বিমানের টিকিট কিনে ১৯ আগস্ট এমিরাটস এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে বিকাল ৩ঃ ৪৫ মিনিটে সে দুবাই হয়ে আমেরিকা পালিয়ে যায়। তার সাথে তার ছিলো স্ত্রী মাকনুনা রহমান ও তার কন্যা নুর ইসাবেলা, মাকসুরাত। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন। মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে নাটের গুরু ছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ব্যয় বাড়াতে ভুয়া ভাউচার তৈরি করা হতো। এসব প্রোগ্রামের টাকা কয়েক গুণ বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে যান। তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শুধু প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখিয়েছে ৪৯ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ টাকা। ওই বছর ২২ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে খরচ দেখানো হয় ৪০ লাখ ৩০ হাজার ৬৮১ টাকা। একই বছরের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস ও ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বনানী কবরস্থানে যান শেখ হাসিনা। এই প্রোগ্রাম দু’টির খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার করে। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এরিয়া ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত কাজ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ২০২৩ সালে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সপরিবারে মুন্সীগঞ্জে বার্ষিক বনভোজনে যান। ৬ ও ৭ জানুয়ারি দুই দিনের জন্য সিরাজদীখানের ঢালিস আম্বার নিবাস রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন তারা। যাতায়াতের জন্য নেওয়া হয় বিশেষ এসি বাস। সন্ধ্যায় আয়াজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ফি। ওই বনভোজনের মধ্যেই প্রথা ভেঙে প্রথমবার ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত হয় ডিএনসিসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড সভা। বনভোজন ও বোর্ড সভার জন্য ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ টাকা খরচ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে। শুধু এই বনভোজনে নয়, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, জেলহত্যা দিবস, মেট্রোরেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয়ের পুরোটাই দেখানো হয়েছে সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন খাত থেকে। সংস্থাটি এসব খাতে সর্বমোট ব্যয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ২২৬ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করতেন। ২০২২ সালের শোক দিবসের খরচ প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচে ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। জেলহত্যা দিবসে প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই দুই অনুষ্ঠানের খরচের বিষয় একই হলেও টাকার অঙ্ক ভিন্ন। জানা গেছে, জেলহত্যা দিবসের সময় এপিএস ফরিদ দেশের বাইরে ছিলেন। সেজন্য মূল খরচটা এখানে এসেছে। কিন্তু তিনি দেশে থাকায় শোক দিবস, বনভোজন, মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খরচের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব অনুষ্ঠানে ভুয়া বাউচার বানিয়ে প্রোগ্রামের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করেছেন। এসব প্রোগ্রাম থেকে ভুয়া ভাউচারে হাতিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। শুধু এসব অনুষ্ঠানে নয়, ২০২১ সালে ২৩ অক্টোবর ঠিকানা রিসোর্টে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ওই সভায় খরচ হয়েছে ৭-৮ লাখ টাকা। কিন্তু আতিকের এপিএস ফরিদ উদ্দিনসহ একটি সিন্ডিকেট ২৯ লাখ টাকা বিল দেখিয়েছে। এর বাইরে প্রতি বছর নানা প্রোগ্রাম ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি। যার প্রতিটি সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে ব্যয় দেখানো হতো। এই বিভাগের প্রধানকে চাপ প্রয়োগ করে ভুয়া ভাউচারে সই করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ফরিদ।