ঢাকা ০২:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
ভারতের পার্লামেন্টে শেখ হাসিনাকে ফেরতের বিষয়ে আলোচনা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ‘ধানমন্ডি ৩২’ মোহাম্মদপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত ৪ পুলিশ সদস্য ধানমন্ডি ৩২ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতি ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব শেখ মুজিবকে নিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক্সে পোস্টের সত্যতা! অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন আটক ক্ষেতলালে ইউএনওর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ময়মনসিংহে শিশুকে অপহরণ করে লাশ গুমের ঘটনায় যুবকের আমৃত্যু কারাদন্ড মৌলভীবাজারে শেখ মুজিবুর রহমানের দু’টি পৃথক ম্যুরাল ভাংচুর করেছে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা মৌলভীবাজার কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা-২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণী উৎসব ভাঙ্গুড়ায় প্রাথমিকের ছাত্রীকে শ্লীলতাহানি: ইন্সট্রাকটরকে মারধর

মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা তার মালিকানা নগদ ডিস্ট্রিবিউশন এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে

  • বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট সময় ০৩:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১০৫০ বার পড়া হয়েছে

পর্ব- ১

ফরিদ উদ্দিন ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকের এপিএস, তাতেই চলে আসে তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। ফরিদের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের নামে আয়োজন ও কেনাকাটা করত কর্পোরেশন। কেনাকাটার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন। যত কমিশন ও দুর্নীতির টাকা সবই নিতেন তিনি। ফরিদ উদ্দিনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্লিন’। এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে খাল পরিস্কারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে কাজের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে সিটি কর্পোরেশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। কর্পোরেশনের ফান্ড ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কর্পোরেশন। আর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায় তার এই অবৈধ টাকা তার এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক নগদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পেট বোতল রিসাইকেল ফ্যাক্টরী করেছে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে। রাজধানীতে তার নামে বেনামে প্রায় চারটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দামী গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, প্রোপাইটর- ফরিদ উদ্দিন, পিতা- আঃ হামিদ, মাতা-দিলারা হামিদ। ঠিকানাঃ হোল্ডিংঃ ২৩/১৩এ, ২৩বি , খিলজী রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাঃ এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সেবা হাউজ, ঘ/অ, রোড- ১৭, গুলশান- ২, টিআইএন নাম্বারঃ ২৬২৫২৯৬৭৩৬৭৯, ট্রেড লাইসেন্স নাম্বারঃ ঞজঅউ/উঘঈঈ/১১১৭৭৭/২০২২, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারঃ ৫৯৮৩৮০৩০৪৯। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাঁর এক ভাই পরিচালনা করছে। জানা যায় তার এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দুইটি ভুয়া ছিলো। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই স্কাই ট্রাভেলস, হাউজ২৫, ৪র্থ তলা, মেইন এভিনিউ, ব্লক- এ, বসুন্ধরা, ভাটারা, ঢাকা এই ঠিকানার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে তিনটি বিমানের টিকিট কিনে ১৯ আগস্ট এমিরাটস এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে বিকাল ৩ঃ ৪৫ মিনিটে সে দুবাই হয়ে আমেরিকা পালিয়ে যায়। তার সাথে তার ছিলো স্ত্রী মাকনুনা রহমান ও তার কন্যা নুর ইসাবেলা, মাকসুরাত। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন। মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে নাটের গুরু ছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ব্যয় বাড়াতে ভুয়া ভাউচার তৈরি করা হতো। এসব প্রোগ্রামের টাকা কয়েক গুণ বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে যান। তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শুধু প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখিয়েছে ৪৯ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ টাকা। ওই বছর ২২ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে খরচ দেখানো হয় ৪০ লাখ ৩০ হাজার ৬৮১ টাকা। একই বছরের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস ও ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বনানী কবরস্থানে যান শেখ হাসিনা। এই প্রোগ্রাম দু’টির খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার করে। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এরিয়া ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত কাজ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ২০২৩ সালে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সপরিবারে মুন্সীগঞ্জে বার্ষিক বনভোজনে যান। ৬ ও ৭ জানুয়ারি দুই দিনের জন্য সিরাজদীখানের ঢালিস আম্বার নিবাস রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন তারা। যাতায়াতের জন্য নেওয়া হয় বিশেষ এসি বাস। সন্ধ্যায় আয়াজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ফি। ওই বনভোজনের মধ্যেই প্রথা ভেঙে প্রথমবার ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত হয় ডিএনসিসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড সভা। বনভোজন ও বোর্ড সভার জন্য ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ টাকা খরচ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে। শুধু এই বনভোজনে নয়, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, জেলহত্যা দিবস, মেট্রোরেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয়ের পুরোটাই দেখানো হয়েছে সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন খাত থেকে। সংস্থাটি এসব খাতে সর্বমোট ব্যয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ২২৬ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করতেন। ২০২২ সালের শোক দিবসের খরচ প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচে ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। জেলহত্যা দিবসে প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই দুই অনুষ্ঠানের খরচের বিষয় একই হলেও টাকার অঙ্ক ভিন্ন। জানা গেছে, জেলহত্যা দিবসের সময় এপিএস ফরিদ দেশের বাইরে ছিলেন। সেজন্য মূল খরচটা এখানে এসেছে। কিন্তু তিনি দেশে থাকায় শোক দিবস, বনভোজন, মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খরচের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব অনুষ্ঠানে ভুয়া বাউচার বানিয়ে প্রোগ্রামের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করেছেন। এসব প্রোগ্রাম থেকে ভুয়া ভাউচারে হাতিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। শুধু এসব অনুষ্ঠানে নয়, ২০২১ সালে ২৩ অক্টোবর ঠিকানা রিসোর্টে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ওই সভায় খরচ হয়েছে ৭-৮ লাখ টাকা। কিন্তু আতিকের এপিএস ফরিদ উদ্দিনসহ একটি সিন্ডিকেট ২৯ লাখ টাকা বিল দেখিয়েছে। এর বাইরে প্রতি বছর নানা প্রোগ্রাম ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি। যার প্রতিটি সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে ব্যয় দেখানো হতো। এই বিভাগের প্রধানকে চাপ প্রয়োগ করে ভুয়া ভাউচারে সই করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ফরিদ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ
Verified by MonsterInsights

মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের দুর্নীতির শত শত কোটি টাকা তার মালিকানা নগদ ডিস্ট্রিবিউশন এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল সহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে

আপডেট সময় ০৩:০৮:২৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ফরিদ উদ্দিন ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকের এপিএস, তাতেই চলে আসে তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। ফরিদের মাধ্যমে উত্তর সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের নামে আয়োজন ও কেনাকাটা করত কর্পোরেশন। কেনাকাটার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন। যত কমিশন ও দুর্নীতির টাকা সবই নিতেন তিনি। ফরিদ উদ্দিনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্লিন’। এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে খাল পরিস্কারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে কাজের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে সিটি কর্পোরেশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা। কর্পোরেশনের ফান্ড ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কর্পোরেশন। আর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে মানুষ। অনুসন্ধানে জানা যায় তার এই অবৈধ টাকা তার এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক নগদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পেট বোতল রিসাইকেল ফ্যাক্টরী করেছে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে। রাজধানীতে তার নামে বেনামে প্রায় চারটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দামী গাড়ি ব্যবহার করতেন তিনি। অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায় এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, প্রোপাইটর- ফরিদ উদ্দিন, পিতা- আঃ হামিদ, মাতা-দিলারা হামিদ। ঠিকানাঃ হোল্ডিংঃ ২৩/১৩এ, ২৩বি , খিলজী রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাঃ এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সেবা হাউজ, ঘ/অ, রোড- ১৭, গুলশান- ২, টিআইএন নাম্বারঃ ২৬২৫২৯৬৭৩৬৭৯, ট্রেড লাইসেন্স নাম্বারঃ ঞজঅউ/উঘঈঈ/১১১৭৭৭/২০২২, জাতীয় পরিচয়পত্র নাম্বারঃ ৫৯৮৩৮০৩০৪৯। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাঁর এক ভাই পরিচালনা করছে। জানা যায় তার এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দুইটি ভুয়া ছিলো। ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই স্কাই ট্রাভেলস, হাউজ২৫, ৪র্থ তলা, মেইন এভিনিউ, ব্লক- এ, বসুন্ধরা, ভাটারা, ঢাকা এই ঠিকানার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে তিনটি বিমানের টিকিট কিনে ১৯ আগস্ট এমিরাটস এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে বিকাল ৩ঃ ৪৫ মিনিটে সে দুবাই হয়ে আমেরিকা পালিয়ে যায়। তার সাথে তার ছিলো স্ত্রী মাকনুনা রহমান ও তার কন্যা নুর ইসাবেলা, মাকসুরাত। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন। মেয়রের অনিয়ম ও দুর্নীতির পেছনে নাটের গুরু ছিলেন তিনি। তার নির্দেশে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ব্যয় বাড়াতে ভুয়া ভাউচার তৈরি করা হতো। এসব প্রোগ্রামের টাকা কয়েক গুণ বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। নথি থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বনানী কবরস্থানে যান। তাঁর আগমন উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন শুধু প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখিয়েছে ৪৯ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ টাকা। ওই বছর ২২ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে খরচ দেখানো হয় ৪০ লাখ ৩০ হাজার ৬৮১ টাকা। একই বছরের ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেল দিবস ও ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বনানী কবরস্থানে যান শেখ হাসিনা। এই প্রোগ্রাম দু’টির খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার করে। ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এরিয়া ব্র্যান্ডিং সংক্রান্ত কাজ বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ৪১ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকা। এছাড়া ২০২৩ সালে ৬ ও ৭ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র, কাউন্সিলর, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সপরিবারে মুন্সীগঞ্জে বার্ষিক বনভোজনে যান। ৬ ও ৭ জানুয়ারি দুই দিনের জন্য সিরাজদীখানের ঢালিস আম্বার নিবাস রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে সেখানে অবস্থান করেন তারা। যাতায়াতের জন্য নেওয়া হয় বিশেষ এসি বাস। সন্ধ্যায় আয়াজন করা হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়নি কোনো ফি। ওই বনভোজনের মধ্যেই প্রথা ভেঙে প্রথমবার ঢাকার বাইরে অনুষ্ঠিত হয় ডিএনসিসির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী বোর্ড সভা। বনভোজন ও বোর্ড সভার জন্য ৬৪ লাখ ৮১ হাজার ২৬৫ টাকা খরচ করা হয় সিটি কর্পোরেশনের তহবিল থেকে। শুধু এই বনভোজনে নয়, জাতীয় শোক দিবস, শেখ রাসেল দিবস, জেলহত্যা দিবস, মেট্রোরেল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ব্যয়ের পুরোটাই দেখানো হয়েছে সমাজকল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন খাত থেকে। সংস্থাটি এসব খাতে সর্বমোট ব্যয় দেখিয়েছে ২ কোটি ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ২২৬ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আতিকুল ইসলামের একান্ত সহকারী সচিব (এপিএস) ফরিদ উদ্দিন কর্পোরেশনের বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও কর্মসূচির ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করতেন। ২০২২ সালের শোক দিবসের খরচ প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচে ৪৯ লাখ ১১ হাজার টাকা দেখানো হয়েছে। জেলহত্যা দিবসে প্যান্ডেল, গেট, লাইট বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে ৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। এই দুই অনুষ্ঠানের খরচের বিষয় একই হলেও টাকার অঙ্ক ভিন্ন। জানা গেছে, জেলহত্যা দিবসের সময় এপিএস ফরিদ দেশের বাইরে ছিলেন। সেজন্য মূল খরচটা এখানে এসেছে। কিন্তু তিনি দেশে থাকায় শোক দিবস, বনভোজন, মেট্রোরেল উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খরচের পরিমাণ কয়েক গুণ বেড়েছে। এসব অনুষ্ঠানে ভুয়া বাউচার বানিয়ে প্রোগ্রামের টাকার অঙ্ক বৃদ্ধি করেছেন। এসব প্রোগ্রাম থেকে ভুয়া ভাউচারে হাতিয়েছেন বড় অঙ্কের টাকা। শুধু এসব অনুষ্ঠানে নয়, ২০২১ সালে ২৩ অক্টোবর ঠিকানা রিসোর্টে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ওই সভায় খরচ হয়েছে ৭-৮ লাখ টাকা। কিন্তু আতিকের এপিএস ফরিদ উদ্দিনসহ একটি সিন্ডিকেট ২৯ লাখ টাকা বিল দেখিয়েছে। এর বাইরে প্রতি বছর নানা প্রোগ্রাম ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে সংস্থাটি। যার প্রতিটি সমাজকল্যাণ বিভাগ থেকে ব্যয় দেখানো হতো। এই বিভাগের প্রধানকে চাপ প্রয়োগ করে ভুয়া ভাউচারে সই করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন ফরিদ।