সরকার পতনের পর থেকে নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রকাশ্যে আসছেন না চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলররা। অফিস করছেন না তারা, রয়েছেন ‘আত্মগোপনে’।
যার প্রভাব পড়েছে নগরিক সেবায়। বিশেষ করে কাউন্সিলরদের অনুপস্থিতির কারণে জাতীয়তা সনদ ও জন্মনিবন্ধনসহ অন্যান্য সনদ ইস্যু করা যাচ্ছে না। এতে ভোগান্তি হচ্ছে সনদ প্রত্যাশীদের।
এদিকে গতকাল ৪১ ওয়ার্ডের সচিবদের সঙ্গে বৈঠক করেন চসিকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা। বৈঠকে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম ওয়ার্ড সচিবদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর পর চসিকের বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড অফিসে ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে ৯ নং উত্তর পাহাড়তলী, ২৫ নং রামপুর, ১০ নং উত্তর কাট্টলী এবং ৬ নং পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ড কার্যালয় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব ভাঙচুরের কারণে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড সচিবসহ বেশ কয়েকটি ওয়ার্ডের সচিব কাজে যোগ দেননি।
তাছাড়া কাউন্সিলর না আসায় অনেকে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। গতকাল বৈঠকে উপস্থিত একাধিক ওয়ার্ড সচিবের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, তাদেরকে কাজে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যে যদি কাউন্সিলররা না আসেন বা তাদের স্বাক্ষর নেওয়া না যায় সেক্ষেত্রে কর্মকর্তারা ভাগ করে সনদ ইস্যু করবেন।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওয়ার্ড সচিবদের কাজে যোগদান করার জন্য বলে দিয়েছি।
এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা আসছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা আসেনি। তবে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।
জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, কয়েকটা ওয়ার্ডে হাতেগোনা দেওয়া হয়েছে।
কাউন্সিলররা কাজে যোগ না দিলে কর্মকর্তারা সনদ ইস্যু করবেন কিনা জানতে চাইলে বলেন, এ বিষয়ে নির্দেশনা আছে। এক্ষেত্রে যেসব কাউন্সিলর যোগ দেবেন তাদের মধ্যেও ভাগ করে দেওয়া হতে পারে। বেশি ওয়ার্ড হলে কর্মকর্তারাও করতে পারেন।
নগরীর ৭, ৯, ১১, ১৩ এবং ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন চসিকের অঞ্চল-১ ও ৫ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম। ৪, ৬, ১৮ এবং ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন চসিকের অঞ্চল-২ ও ৩ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরীন ফেরদৌসী। ১৫, ২১, ২৩, ২৫ এবং ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বে রয়েছেন চসিকের অঞ্চল-৪ ও ৬ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা রক্তিম চৌধুরী।
ওই অফিস আদেশে বলা হয়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত স্থানীয় সরকার বিভাগের ২০২৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর প্রজ্ঞাপন মূলে এবং ‘জন্ম ও মৃত্যু আইন ২০০৪’ এর ধারা ৪ (ক) অনুযায়ী চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের অনুমোদনক্রমে এদিকে কয়েকটি ওয়ার্ডে গতকাল জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জন্মনিবন্ধন সনদের ক্ষেত্রে কাউন্সিলরের মোবাইলে একটি ওটিপি (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) পাঠানো হয়। কাউন্সিলরের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করে ওটিপি সংগ্রহ করে জন্মনিবন্ধন সনদ ইস্যু করা হচ্ছে।
সিটি মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম বলেছেন, ওটিপি দিয়ে কয়েকটি ওয়ার্ডে জন্মনিবন্ধন সনদ দেওয়া হচ্ছে। চসিকের কার্যক্রম সম্পর্কে তিনি বলেন, দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে। প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ একটু স্লো। বর্ষায় রাস্তাঘাটের যে ক্ষতি হয়েছে সেটা দ্রুত মেরামত করা হবে।
সামাজিক মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে ৭ নং পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোবারক আলী সাংবাদিককে বলেন, যেহেতু স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্পোরেশনের নির্বাচিত পর্ষদ বাতিল করেনি তাই আমরা এখনো বৈধ।
অফিসে যোগ না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সরকার পতনের পর অনেক ওয়ার্ড অফিসে ভাঙচুর করা হয়। এগুলো ছাত্ররা করেনি। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এসব হামলা হতে পারে। সেজন্যই আমরা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে অফিস করব। তবে অফিস না করলেও কাজ করছি। আজও (গতকাল) একটি পারিবারিক সনদ ও ২৫টি জাতীয়তা সনদ দিয়েছি।