আইন করে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না নিষিদ্ধ পলিথিন। মার্কেট থেকে নিত্যপণ্যের বাজার সবখানেই দিন দিন বাড়ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। প্রতিটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পণ্য কিনতে হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ। এভাবেই ছড়িয়ে পড়ছে সবখানেই।
পরিস্থিতি দেখলে বুঝার উপায় নেই যে, পলিথিন নিষিদ্ধ। যা মাটি ও পানির নিচে অক্ষত থেকে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়েছে জনসাস্থ্য ও পরিবেশ। ফলে প্রশাসনের ঢিলেঢালা মনোভাবের কারণে পলিথিনের বিস্তার ঘটছে এমনটাই মনে করেন সাধারণ মানুষ। অথচ আইনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার সক্ষমতা থাকলেও সংশ্লিষ্টদের বাজারে নেই তেমন কোন ভূমিকা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ক্ষতিকর পলিথিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে মানব স্বাস্থ্য।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ২০০২ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ সরকার পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এছাড়াও আইন অমান্য কারীর জন্য রয়েছে ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান। বাজারজাতকারীকে ছয় মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধানও রয়েছে। সর্বশেষ চলতি মাসের ১ অক্টোবরে সুপার শপে পলিথিন ও পলিপ্রপিলিনের ব্যবহার নিষিদ্ধের উপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরপর ১ নভেম্বর থেকে দেশের সর্বত্রই পলিথিন ব্যবহারকারীদের আইনের আওতায় আনতে কঠোর বার্তা দিয়েছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, ভোগ্য পণ্যের কাঁচাবাজার, পুরাতন বাজার, নতুন বাজার এবং ভাইনা কাঁচাবাজারে পলিথিনের বিকল্প কোন ব্যাগ ক্রেতাদের হাতে দেখা যায়নি। মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, সবজ্ ডিম, ফল ও মিষ্টি যাই কেনা হোক সব পণ্যই পলিথিনে ভরবে। তবে সবজি বাজারে পলিথিনের ব্যবহার বেশি। আবার পলিথিন ছাড়াও রয়েছে মোড়কজাত পণ্য। একজন ক্রেতার কেনাকাটা শেষে দেখা যায় হাতে রয়েছে পণ্য ভর্তি ৬টি পলিথিন ব্যাগ। তারমধ্যে ৪টি ব্যাগে সবজি এবং দু’টি ব্যাগে আটা, লবণ আর নুডুলস। সব মিলিয়ে পলিথিনের সংখ্যা ৯ টা।
এভাবেই পলিথিন ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্রই। ফলে ক্ষতিকর পলিথিন জমা হচ্ছে উর্বর জমিতে, বাড়ির আঙিনায়, ড্রেন, নদী ও খালে। যার প্রভাব পড়ছে মানব স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উপর। অন্যদিকে জেলার নবগঙ্গা নদী, কুমার নদীর ও চিত্রা নদী বাজার সংশ্লিষ্ট হওয়ায় নদী পাড়ে পলিথিন ফেলে স্তুপ করা হয়েছে। ফলে পানিতে ভেসে গিয়ে নদীর তলদেশে জমা হচ্ছে পলিথিন। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নদীর প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হওয়া ঝর্ণা এবং মাছের প্রজননের স্থান। এতসব ক্ষতি হলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ে নেই তেমন কোন কার্যক্রম। মাঝে মধ্যে জরিমানা ধরে দায় সারেন। জেলায় এখনও পর্যন্ত নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রির দায়ে জেলে যেতে হয়নি কোন ব্যবসায়ীকে।
স্কুল শিক্ষিকা মনিরা বেগম বলেন, উপায় কি বাজারের ব্যাগ সবসময় বয়ে নিয়ে বেড়ানো যায় না। পলিথিন ব্যাগে পণ্য কিনলাম বাড়ি গিয়ে ফেলে দিলাম। সুবিধা আছে কিন্তু পলিথিন ক্ষতিও করে।
পলিথিন ব্যবসায়ী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, জানি পলিথিন বিক্রি নিষিদ্ধ। কিন্তু গ্রাহকের চাহিদা রয়েছে। সরকার পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের ব্যবস্থা করলে ক্রেতা বিক্রেতার জন্য ভালো হয়। এবং আমরা বৈধভাবে ব্যবসাটা করতে পারবো।
খুলনা বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিকুর রহমান মুঠোফোনে বাংলাদেশ সময়কে জানান, মাগুরা জেলায় নিষিদ্ধ পলিথিন বিক্রয়ের দায়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত করে এখনো পর্যন্ত কাউকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়নি। তবে ইতোপূর্বে, ব্যবসায়ীদের নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মাগুরা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. অলোক কুমার সাহা বাংলাদেশ সময়কে বলেন, পলিথিন বা প্লাস্টিকের সমগোত্রীয় মাইক্রো প্লাস্টিক এখন বিভিন্ন খাদ্যের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। এটা এমন ভাবে ছড়িয়েছে যে মায়ের দুধেও মাইক্রো প্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। আমি মনে করি ক্ষতিকর পলিথিনের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে হুমকিতে পড়বে মানব স্বাস্থ্য।