স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যশোর আব্দুস সামাদ মেমোরিয়াল একাডেমীর প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা আত্মসাৎ সহ অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনৈতিকতার অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের নামে বিভিন্ন অজুহাতে অর্থ আত্মসাতে মেতে থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক ও অভিভাবক জানিয়েছেন আতিয়ার রহমান প্রধান শিক্ষক থাকাকালে স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ছিল ৮ শতাধিক।
২০১৫ সালে সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর ক্রমেই কমতে থাকে শিক্ষার্থীর সংখ্যা। বর্তমানে স্কুলের মোট ছাত্র-ছাত্রী ৩১৭ জন। শিক্ষক আছেন ১৯ জন এবং কর্মচারী আছেন ৭ জন। শিক্ষকদের মধ্যে নারী শিক্ষক আছেন ৮ জন।
শিক্ষকবৃন্দ জানান, প্রধান শিক্ষক যোগদানের ২ বছর পরই নানা রকমের অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতায় জড়িয়ে পড়েন। একইসাথে সহকারী শিক্ষক মালারানী সাহার সাথে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন।
সহকারী প্রধান শিক্ষক, ল্যাব এসিস্ট্যান্ট, মহিলা আয়া এবং পরিচ্ছন্ন কর্মী নিয়োগ দিয়ে তৎকালীন সভাপতি হাজী সুমনের যোগসাজসে অর্ধ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান।
এ বছরের শুরুতে একজন আত্মীয়সহ পাঁচজনকে নিয়োগ দিয়ে প্রাইমারি সেকশন চালু করেন। যেখানে প্রথম শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ছাত্র সংখ্যা ২৪-২৫ জন। অভিযোগ উঠেছে প্রাইমারি সেকশনের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে কোনো প্রকার ব্যাংক ড্রাফট বা পোস্টাল অর্ডার চাওয়া হয়নি।
কিন্তু পরীক্ষার দিনে প্রার্থীর সংখ্যা ১০০ জন ছাড়ালে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে আদায় করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের কারণে অনেকে পরীক্ষা না দিয়ে চলে যান। যারা ছিলেন তাদের সংখ্যা প্রায় ৮০ জন। টাকা ওঠে ৮ হাজার টাকার মতো। কিন্তু সে ঢাকাও যারা ডিউটি করেছেন তাদেরকে না দিয়ে এবং স্কুল ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজেই আত্মসাৎ করেন।
শিক্ষক, অভিভাবক এবং স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, বেতন কম হওয়ায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯০ শতাংশই দরিদ্র পরিবারের সন্তান ভর্তি হন। অধিকাংশের অভিভাবক খুঁদে ব্যবসায়ী, রিকশাচালক, দিনমজুর বা ভ্যানচালক। ভালো চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের কোনো সন্তানরা এখানে খুব একটা ভর্তি হয় না।
২০২১ সালে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির বিষয়ে স্কুলের তৎকালীন সভাপতি এস এম আক্তারুজ্জামান তুহিন শিক্ষার্থীদের ভর্তি ফ্রি এবং বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তখন স্কুলের শিক্ষকরা পাড়া মহল্লা ঘুরে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করেন। ঘোষণা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সংগ্রহ করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক পাবেন ১ হাজার টাকা। সে সময় ৬০/৭০ জন কে ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করা হয়।
সভাপতির কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে তাদের স্কুল ড্রেস করে দেয়া হবে বলা হলেও বাধ সাধেন সৈয়দ মিজানুর রহমান। তিনি গরীব অভিভাবকদের কাছ থেকে ড্রেসের মজুরির টাকা আদায় করেন। অথচ এ খাতে সভাপতি ১ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন। স্কুলের সিলেবাস, খাতা, ডায়েরি ছাপা ইত্যাদি যেকোনো কিছুতেই অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান। যা অভিভাবকদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্য দিয়েছে।
স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী এবং অভিভাবকদের সাথেও তার দুর্ব্যবহার নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। শিক্ষিকা মালারানীকে নিয়ে তার অফিসকক্ষে ঘন্টার পর ঘন্টা খোশ গল্পে মেতে থাকেন। তাদেরকে একান্ত সান্নিধ্যে থাকতেও দেখেছেন অনেক শিক্ষক। কিন্তু চাকরির ভয়ে কেউ তা মুখ খুলতে সাহস পাননি।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, স্কুলের নামে শহরের শাহজালাল ব্যাংকে এফডিআর করা আছে ৪০ লাখ। ওই টাকার লভ্যাংশের ২৫ শতাংশ অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের কল্যাণে এবং স্কুলের হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের খরচের জন্য সিদ্ধান্ত আছে। ট্রাস্টের টাকা উত্তোলন করতে তিনজন অপারেটরের মধ্যে দু’জনের স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক। কিন্তু প্রধান শিক্ষক সম্পূর্ণ অনৈতিক পন্থায় সেই এফডিআর (A/C no- 110253100011051) থেকে গত ১৮ জুলাই ১১ লাখ টাকা উত্তোলন করেন।
এরপর সেই টাকা আবার স্কুলের সেভিংস একাউন্টের (a/c no-110212100012665) এই নাম্বারে জমা করে সেখান থেকে পাঁচ লাখ টাকা উত্তোলন করেন স্কুলের ভেতরে মার্কেট নির্মাণ করার জন্য। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে পরের মাসের ১১ তারিখে ৪ লাখ এবং ১৩ তারিখে ১ লাখ টাকা জমা দিয়ে হিসাব ঠিক রাখেন।
সৈয়দ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ৭ আগস্ট যশোরের জেলা প্রশাসক বরাবর বিভিন্ন অভিযোগ সংবলিত একটি দরখাস্ত প্রদান করা হয়। সেই দরখাস্তে স্থানীয় জনগণ স্কুলের ক্যাম্পাসের ভিতর বৈধ প্ল্যান ছাড়াই মার্কেট নির্মাণ বন্ধসহ স্কুলের বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি রোধ করার দাবি জানান।
স্কুলে অডিট করানোর নামে প্রধান শিক্ষক ২০১৯ সালে শিক্ষকদের এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ টাকা নিয়ে ঢাকায় যান। কিন্তু সেই অডিটে প্রায় ৪ লাখ টাকা খরচ দেখানো হলেও আজও শিক্ষকরা সেই রিপোর্টের মুখ দেখেননি।
এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষকের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি ষড়যন্ত্রের শিকার। বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ থাকতে পারে কিন্তু সব অভিযোগ সঠিক নয় বলে তিনি দাবি করেন।
স্কুলের সভাপতি ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা তামান্না ফেরদৌসের সাথে স্কুলের বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত বিভিন্ন অভিযোগ ইতিমধ্যে আমি হাতে পেয়েছি। অভিযোগ প্রমানিত হলে তার বিরুদ্ধে বিধিমোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন বলেন, এখনো আমার দপ্তরে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই মাত্র পাওয়াঃ
প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অর্ধ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ
-
যশোর প্রতিনিধি
- আপডেট সময় ১২:০১:৩৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
- ৬৩৯ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ