বাংলাদেশের অন্যতম প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠন ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ’কে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর অধীনে নিষিদ্ধ করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে ছাত্রলীগ ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছে।
বুধবার ৯২৩ অক্টোবর) রাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞার কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ছাত্রলীগ বিগত ১৫ বছরের শাসনামলে হত্যা, নির্যাতন, সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি এবং যৌন নিপীড়নসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এর ক্ষমতাবলে এই নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।
নিষেধাজ্ঞার পরপরই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এর প্রতিবাদ জানিয়ে এক বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিবৃতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং দেশবিরোধী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে এবং সরকারের পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।
ছাত্রলীগের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয় যে, সংগঠনটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক আন্দোলনগুলোতে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছে, যেমন ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধসহ বিভিন্ন গণআন্দোলন। তারা দাবি করেছে যে, ছাত্রলীগকে একটি ‘মেটিকিউলাস প্ল্যানের’ অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বাধীনতার পর থেকে ছাত্রলীগ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল, যার মধ্যে রয়েছে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, সিট বাণিজ্য, এবং টেন্ডারবাজি। প্রজ্ঞাপনে আরও উল্লেখ করা হয়, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে, যার ফলে সরকার সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯-এর অধীনে সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে।
গত ১৫ জুলাই থেকে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে শত শত নিরীহ শিক্ষার্থীকে হত্যা ও আহত করার অভিযোগ উঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। এই ঘটনাগুলো নিষেধাজ্ঞার পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া, সরকার মনে করছে ছাত্রলীগ রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল।
ছাত্রলীগ বাংলাদেশের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটি দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনসহ বিভিন্ন গণআন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, ২০১৯ সালে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড এবং ২০১২ সালে বিশ্বজিৎ দাস হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের সম্পৃক্ততা ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে সংগঠনটি গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন আন্দোলন ও কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ছিল। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্রলীগের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়, যার ফলে এই নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার এই সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। বিরোধী দলগুলো সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও ছাত্রলীগ এবং তাদের সমর্থকরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।