ঢাকা ০২:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
সোনারগাঁয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর ৪৪ শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় নবীনগরে রিপন মুন্সির হস্তক্ষেপে দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান ঝুঁকির মুখে কালনী এক্সপ্রেস, চালকের দক্ষতায় রক্ষা নবীনগরে ফসলি জমির মাটি কাটায় এলাকাবাসীর প্রতিবাদ, প্রশাসনের হস্তক্ষেপের আশ্বাস ময়মনসিংহ জেলা পরিষদের প্রশাসকের অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন শ্রম অধিদপ্তরের নতুন ডিজি এ কে এম তারিকুল আলম ডুয়েট প্রাক্তন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল এসোসিয়েশন (ডেজা)’র উদ্যোগে মরহুম প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম খানের স্মরণে শোকসভা, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত কোরবানির উপলক্ষে – বাবুগঞ্জে কামাররা ব্যস্ততা সময় পার করছে বারবার ভূল চিকিৎসায় নবজাতক ও প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ; ক্লিনিক বন্ধের দাবি সাতক্ষীরায় যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় ইজিবাইক যাত্রী শিশুর মৃত্যু, চালকসহ আহত ৬ পাবিপ্রবি’র প্রথম জাতীয় কনফারেন্সের মাধ্যমে গবেষণার দ্বার উম্মোচিত হয়েছে: ফারুক হোসেন চৌধুরী ভুরুঙ্গামারী সীমান্তে বিএসএফের পুশইনকৃত ১২ বাংলাদেশী আটক
হুন্ডি ও অর্থপাচার সমানতালে

মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের ভাই ফারুকের বিরুদ্ধে হুন্ডি ও অর্থপাচারের অভিযোগ

এ যেন এক ক্লিক দূরত্ব, যেন চোখের পলক! মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে পরিমাণ ও ফোন নম্বর লিখে টাচ করলেই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে অর্থ চলে যাচ্ছে ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন কাগুজে ঠোঙার চেয়েও মূল্যহীন করে ফেলছে নগদের এজেন্ট নামধারী এক শ্রেণির অর্থপাচারকারী। বিদেশে অবস্থান করা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে নগদের এই অসাধু এজেন্টরা। এই অবৈধ হুন্ডির কারণে ব্যাংকের ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স আসা অনেক কমে গেছে বলে জানান একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ফরিদ উদ্দিন ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকের এপিএস। তাতেই চলে আসে তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। ফরিদের মাধ্যমে উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের নামে আয়াজন ও কেনাকাটা করত করপোরেশন। এ কেনাকাটার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন। যত কমিশন ও দুর্নীতির টাকা সবই নিতেন তিনি। ফরিদ উদ্দিনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্লিন’। এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে খাল পরিস্কারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে কাজের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে সিটি করপোরেশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।টাকা করপোরেশনের ফান্ড ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করপোরেশন। আর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর এই অবৈধ টাকা তাঁর এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক নগদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পিট বোতল রিসাইক্লিন ফেক্টরী করেছে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে. রাজধানীতে তার নামে-বেনামে প্রায় চারটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দামী গাড়ী ব্যবহার করতেন তিনি।

অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল,প্রোপাইটর – ফরিদ উদ্দিন, পিতা- (আ.) হামিদ, মাতা-দিলারা হামিদ। ঠিকানাঃ হোল্ডিং: ২৩/১৩এ,২৩বি, খিলজী রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা: এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সেবা হাউজ, N/A, রোড- ১৭, গুলশান -২, টিআইএন নাম্বার: ২৬২৫২৯৬৭৩৬৭৯, ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার: TRAD/DNCC/111777/2022, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ৫৯৮৩৮০৩০৪৯। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাঁর এক ভাই পরিচালনা করছে।

জানা যায়, তাঁর এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দু’টি ভুয়া ঠিকানা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এপিএস ফরিদের ছোট ভাই ফারুক আহমেদ ফরিদের নামে এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নগদ ডিস্ট্রিবিউটরের ব্যবসা করছেন কালিয়াকৈরের চন্দ্রা বাস স্ট্যান্ডের লাছানিয়া রেষ্টুরেন্টের ভবনের তৃতীয় তলায়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ফরিদের অবৈধ উপার্জনের অধিকাংশ অর্থ এফ। আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর নগদ ডিস্ট্রিবিউটারে ইনভেষ্ট করে তাঁর ছোট ভাই ফারুকের মাধ্যমে হুন্ডি ও অর্থপাচারের ব্যবসা রমরমা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই স্কাই ট্রাভেলস, হাউজ- ২৫, ৪র্থ তলা, মেইন এভন্যিউ, ব্লক-এ, বসুন্ধরা, ভাটারা, ঢাকা এই ঠিকানার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে তিনটি বিমানের টিকিট কিনে গত ১৯ আগস্ট ২০২৪ এমিরাটস এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে বিকাল ৩ : ৪৫ মিনিটে সে দুবাই হয়ে আমেরিকা পালিয়ে যায়। তার সাথে তার ছিলো স্ত্রী মাকনুনা রহমান ও তার কন্য নুর ইসাবেলা, মাকসুরাত।

বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন অনুযায়ী, বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। আর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম অনুমতি নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু নগদের এজেন্টরা বিদেশি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলেমিশে অর্থ পাঠানোর কাজ করছে, যা অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। নগদের মাধ্যমে এভাবে অর্থ পাচার করার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অজানা নয়।

গত বছরের শুরুর দিকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ সরেজমিনে গিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্তদল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যায়। তারা সেখানে দেখেছে, বাংলায় নগদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে দেশে পাঠানো হচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে নগদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হচ্ছে ভারতের কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন স্থানে, অর্থ যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ আরো কিছু দেশেও। নগদের এসব এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, এমনকি অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করছে; শোধ করা হচ্ছে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য আনার মূল্য।

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর আগেও হুন্ডি করে বিদেশ থেকে টাকা আনা যেত, বিদেশে টাকা পাঠানোও যেত। তবে তাতে সময় লাগত অনেক বেশি। তখন হুন্ডিকারীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে টাকা পৌঁছে দিয়ে আসতে হতো। কিন্তু নগদ এজেন্টদের সেই দুর্বলতা নেই। মুহূর্তেই নগদ করে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছে পাচারকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে প্রায়ই এজেন্ট নম্বরের বদলে ব্যক্তিগত নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে তারা।

রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কম, সময় নষ্ট করে দূরের ব্যাংকে যেতে হয় না। ফলে বেশিরভাগ প্রবাসী বিদেশ থেকে নগদ বা বিকাশের মাধ্যমেই হুন্ডি করা পছন্দ করছে। আবার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো বড় ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার। বিশেষ প্রয়োজনে টাকা পাঠাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়, তবে তা সহজে পাওয়া যায় না। এজন্য অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। তাই নগদ/বিকাশের মাধ্যমে মুহূর্তেই ঝামেলাহীনভাবে অর্থপাচার বাড়ছে বিদেশে।

জানা যায়, ঢাকার ইস্কাটনের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কাজল ইসলাম গত মাসে ভারতের কলকাতায় যান। সেখান থেকে দেশে আসার আগেই তাঁর অর্থ খরচ হয়ে যায়। পরে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে কলকাতার একটি বিকাশ দোকানের নম্বর দিয়ে ২৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। ঢাকায় এক বিকাশ এজেন্টকে দেওয়া ২৫ হাজার টাকা দুই মিনেটের মধ্যেই কাজল ইসলামের হাতে পৌঁছে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সময়কে বলেন, নগদ/বিকাশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে হুন্ডি করে টাকা আসছে, আবার দেশ থেকেও হুন্ডি করে বিদেশে টাকা পাঠানো হচ্ছে। তারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজেও অর্থ স্থানান্তর করছে। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এটা রোধ করা সম্ভব হবে।অর্থপাচার প্রতিরোধ ও অবৈধ লেনদেন বন্ধে নগদ/বিকাশের কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করতে বা হুন্ডি করে দেশে টাকা আনার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এজেন্টদের কাছে কোন ধরনের বার্তা আসে, সেগুলো সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করতে পারে। এ ধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধে দেশে আইন আছে, শুধু যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

সোনারগাঁয়ে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর ৪৪ শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়

Verified by MonsterInsights

হুন্ডি ও অর্থপাচার সমানতালে

মেয়র আতিকের এপিএস ফরিদের ভাই ফারুকের বিরুদ্ধে হুন্ডি ও অর্থপাচারের অভিযোগ

আপডেট সময় ০৩:০৬:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪

এ যেন এক ক্লিক দূরত্ব, যেন চোখের পলক! মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে পরিমাণ ও ফোন নম্বর লিখে টাচ করলেই মুহূর্তে বাংলাদেশ থেকে অর্থ চলে যাচ্ছে ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন কাগুজে ঠোঙার চেয়েও মূল্যহীন করে ফেলছে নগদের এজেন্ট নামধারী এক শ্রেণির অর্থপাচারকারী। বিদেশে অবস্থান করা হুন্ডি ব্যবসায়ীদের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে নগদের এই অসাধু এজেন্টরা। এই অবৈধ হুন্ডির কারণে ব্যাংকের ছোট অঙ্কের রেমিট্যান্স আসা অনেক কমে গেছে বলে জানান একটি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

ফরিদ উদ্দিন ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকের এপিএস। তাতেই চলে আসে তার কাছে আলাদিনের চেরাগ। ফরিদের মাধ্যমে উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানের নামে আয়াজন ও কেনাকাটা করত করপোরেশন। এ কেনাকাটার জন্যও তিনি নির্দিষ্ট হারে কমিশন নিতেন। যত কমিশন ও দুর্নীতির টাকা সবই নিতেন তিনি। ফরিদ উদ্দিনের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ‘বিডি ক্লিন’। এই প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে খাল পরিস্কারসহ বিভিন্ন নামকাওয়াস্তে কাজের মাধ্যমে কয়েক কিস্তিতে সিটি করপোরেশন থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকা।টাকা করপোরেশনের ফান্ড ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে করপোরেশন। আর উন্নয়ন বঞ্চিত হয়েছে মানুষ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, তাঁর এই অবৈধ টাকা তাঁর এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামক নগদ ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সে বিনিয়োগ করেছে। এছাড়া পিট বোতল রিসাইক্লিন ফেক্টরী করেছে প্রায় শত কোটি টাকা ব্যয়ে. রাজধানীতে তার নামে-বেনামে প্রায় চারটি ফ্ল্যাটের পাশাপাশি দামী গাড়ী ব্যবহার করতেন তিনি।

অনুসন্ধানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল,প্রোপাইটর – ফরিদ উদ্দিন, পিতা- (আ.) হামিদ, মাতা-দিলারা হামিদ। ঠিকানাঃ হোল্ডিং: ২৩/১৩এ,২৩বি, খিলজী রোড, মোহাম্মদপুর, উত্তর সিটি কর্পোরেশন। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা: এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সেবা হাউজ, N/A, রোড- ১৭, গুলশান -২, টিআইএন নাম্বার: ২৬২৫২৯৬৭৩৬৭৯, ট্রেড লাইসেন্স নাম্বার: TRAD/DNCC/111777/2022, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর: ৫৯৮৩৮০৩০৪৯। এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে তাঁর এক ভাই পরিচালনা করছে।

জানা যায়, তাঁর এই প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা দু’টি ভুয়া ঠিকানা। সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, এপিএস ফরিদের ছোট ভাই ফারুক আহমেদ ফরিদের নামে এফ আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নগদ ডিস্ট্রিবিউটরের ব্যবসা করছেন কালিয়াকৈরের চন্দ্রা বাস স্ট্যান্ডের লাছানিয়া রেষ্টুরেন্টের ভবনের তৃতীয় তলায়।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, ফরিদের অবৈধ উপার্জনের অধিকাংশ অর্থ এফ। আর ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল এর নগদ ডিস্ট্রিবিউটারে ইনভেষ্ট করে তাঁর ছোট ভাই ফারুকের মাধ্যমে হুন্ডি ও অর্থপাচারের ব্যবসা রমরমা চালিয়ে যাচ্ছেন।

উল্লেখ্য, ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর থেকেই ফরিদ আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থেকেই স্কাই ট্রাভেলস, হাউজ- ২৫, ৪র্থ তলা, মেইন এভন্যিউ, ব্লক-এ, বসুন্ধরা, ভাটারা, ঢাকা এই ঠিকানার ট্রাভেলস এজেন্সির মাধ্যমে তিনটি বিমানের টিকিট কিনে গত ১৯ আগস্ট ২০২৪ এমিরাটস এয়ারওয়েজ বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর যোগে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হতে বিকাল ৩ : ৪৫ মিনিটে সে দুবাই হয়ে আমেরিকা পালিয়ে যায়। তার সাথে তার ছিলো স্ত্রী মাকনুনা রহমান ও তার কন্য নুর ইসাবেলা, মাকসুরাত।

বৈদেশিক মুদ্রা নীতি আইন অনুযায়ী, বিদেশ থেকে দেশে অর্থ পাঠাতে হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। আর বাংলাদেশ থেকে বিদেশে অর্থ পাঠাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের আগাম অনুমতি নিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। কিন্তু নগদের এজেন্টরা বিদেশি হুন্ডি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিলেমিশে অর্থ পাঠানোর কাজ করছে, যা অর্থপাচার প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ। নগদের মাধ্যমে এভাবে অর্থ পাচার করার বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকেরও অজানা নয়।

গত বছরের শুরুর দিকে রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ সরেজমিনে গিয়ে দেখতে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি তদন্তদল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে যায়। তারা সেখানে দেখেছে, বাংলায় নগদের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে প্রবাসীদের কাছ থেকে রেমিট্যান্স নিয়ে দেশে পাঠানো হচ্ছে। একইভাবে বাংলাদেশ থেকে নগদের মাধ্যমে টাকা পাঠানো হচ্ছে ভারতের কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন স্থানে, অর্থ যাচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ আরো কিছু দেশেও। নগদের এসব এজেন্ট মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে, এমনকি অপহরণের পর মুক্তিপণ আদায় করছে; শোধ করা হচ্ছে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাই পণ্য আনার মূল্য।

দেশে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবস্থা চালুর আগেও হুন্ডি করে বিদেশ থেকে টাকা আনা যেত, বিদেশে টাকা পাঠানোও যেত। তবে তাতে সময় লাগত অনেক বেশি। তখন হুন্ডিকারীদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে গিয়ে টাকা পৌঁছে দিয়ে আসতে হতো। কিন্তু নগদ এজেন্টদের সেই দুর্বলতা নেই। মুহূর্তেই নগদ করে অর্থ পাঠিয়ে দিচ্ছে পাচারকারীর দেওয়া মোবাইল নম্বরে। এক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে প্রায়ই এজেন্ট নম্বরের বদলে ব্যক্তিগত নগদ অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করছে তারা।

রেমিট্যান্স পাঠানোর খরচ কম, সময় নষ্ট করে দূরের ব্যাংকে যেতে হয় না। ফলে বেশিরভাগ প্রবাসী বিদেশ থেকে নগদ বা বিকাশের মাধ্যমেই হুন্ডি করা পছন্দ করছে। আবার বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো বড় ঝক্কি-ঝামেলার ব্যাপার। বিশেষ প্রয়োজনে টাকা পাঠাতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হয়, তবে তা সহজে পাওয়া যায় না। এজন্য অপেক্ষা করতে হয় লম্বা সময়। তাই নগদ/বিকাশের মাধ্যমে মুহূর্তেই ঝামেলাহীনভাবে অর্থপাচার বাড়ছে বিদেশে।

জানা যায়, ঢাকার ইস্কাটনের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কাজল ইসলাম গত মাসে ভারতের কলকাতায় যান। সেখান থেকে দেশে আসার আগেই তাঁর অর্থ খরচ হয়ে যায়। পরে তিনি তাঁর এক সহকর্মীকে কলকাতার একটি বিকাশ দোকানের নম্বর দিয়ে ২৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। ঢাকায় এক বিকাশ এজেন্টকে দেওয়া ২৫ হাজার টাকা দুই মিনেটের মধ্যেই কাজল ইসলামের হাতে পৌঁছে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বাংলাদেশ সময়কে বলেন, নগদ/বিকাশের মাধ্যমে বিদেশ থেকে হুন্ডি করে টাকা আসছে, আবার দেশ থেকেও হুন্ডি করে বিদেশে টাকা পাঠানো হচ্ছে। তারা বিভিন্ন অনৈতিক কাজেও অর্থ স্থানান্তর করছে। এ ধরনের বেশ কিছু ঘটনা বাংলাদেশ ব্যাংকও জানে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অপরাধীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে এটা রোধ করা সম্ভব হবে।অর্থপাচার প্রতিরোধ ও অবৈধ লেনদেন বন্ধে নগদ/বিকাশের কর্তৃপক্ষেরও দায়িত্ব রয়েছে। বিদেশে অর্থ পাচার করতে বা হুন্ডি করে দেশে টাকা আনার ক্ষেত্রে নিশ্চয়ই এজেন্টদের কাছে কোন ধরনের বার্তা আসে, সেগুলো সংরক্ষণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যাচাই-বাছাই করতে পারে। এ ধরনের অবৈধ লেনদেন বন্ধে দেশে আইন আছে, শুধু যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে।