আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (ব়্যাব) বিলুপ্ত করার সুপারিশ করেছে। সংস্থাটি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অপব্যবহার রোধই নয়, নিরাপত্তা বাহিনী যাতে পরবর্তী সরকারের দমন-পীড়নের হাতিয়ার না হয়, তা নিশ্চিত করতেও এই পদক্ষেপ প্রয়োজন।
এইচআরডব্লিউর সিনিয়র গবেষক জুলিয়া ব্লেকনার বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে মানবাধিকার ও বাকস্বাধীনতা নিয়ে প্রতিশ্রুতির বিপরীত আচরণ দেখা যাচ্ছে। র্যাব, যে বাহিনীটি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, মানবাধিকার সংগঠন এবং গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশন দীর্ঘদিন ধরে এর বিলুপ্তির দাবি জানিয়ে আসছে।
এমন প্রেক্ষাপটে, ২০২১ সালে মার্কিন সরকার র্যাবের ৭ সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর পরপরই গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনও বাহিনীটির বিলুপ্তির সুপারিশ করে। এইচআরডব্লিউ আরও বলেছে, র্যাবের মাধ্যমে দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে এবং বাহিনীর কর্মকর্তাদের কার্যক্রমে দমন-পীড়ন বিরাজ করছে।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনটি, ‘আফটার দ্য মনসুন রেভল্যুশন : আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’, গত ২৮ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাঠামোগত সংস্কার অত্যন্ত জরুরি।
ফারুক ফয়সাল, নির্বাহী পরিচালক আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বলেছেন, “র্যাবের মতো একটি বাহিনী দেশে রাখা সম্ভব নয়, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।” তবে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, “একটি বিশেষায়িত বাহিনী রাষ্ট্রের জন্য প্রয়োজন হতে পারে, তবে এই বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত এবং মানবাধিকার-সম্মতভাবে কাজ করতে হবে।”
এছাড়া, মানবাধিকার সংস্থা প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সংস্কারেরও সুপারিশ করেছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতার অভাব বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় গুরুতর সমস্যা তৈরি করেছে। সংস্থাটি এসব সমস্যার সমাধান করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছে।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের সময় সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী ও রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলা দায়ের এবং গণগ্রেপ্তারের ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
এছাড়া, প্রতিবেদনটি সরকারকে জবাবদিহির নিশ্চয়তা ও কাঠামোগত সংস্কার গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছে, যাতে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ করা যায় এবং দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নত হয়।