বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, গত ১৫ বছরে পতিত স্বৈরাচারের আমলে আমি, আপনি আপনারা সকলেই যারা অন্যায় অত্যাচার ও হামলা মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছি, তার প্রতিশোধ আমরা অবশ্যই চাই। কিন্তু সেই প্রতিশোধ হবে ৩১ দফা বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে জনগণের ভালোবাসা অর্জন করা। বিএনপির প্রতিটি নেতা কর্মীর দায়িত্ব হচ্ছে ৩১ দফার প্রতিটি দফা নিজে যেমন আয়ত্ত করবে তেমনি দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে ৩১ দফার সুফল ও বাস্তবায়নে তাদের সমর্থন প্রত্যাশা করা। মনে রাখতে হবে এই ৩১ দফা কেবল মাত্র বিএনপি নয়, এটা বিগত স্বৈরাচার আমলে রাজপথে থাকা সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের। তবে বড় দল হিসেবে এর বাস্তবায়নের দায় অনেকটা বিএনপির ওপর বর্তায়।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইসমাইল জাবিউল্লাহ, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশারফ হোসেন, সহ প্রশিক্ষণ সম্পাদক রেহানা আক্তার রানু, কেন্দ্রীয় মিডিয়া সেলের সদস্য মাহমুদা হাবীবা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির সদস্য ইসরাফিল খসরু চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, যশোর চেম্বারের সভাপতি মিজানুর রহমান খাঁন, দেলোয়ার হোসেন খোকন, মুক্তিযোদ্ধা ফেরদৌসী বেগম, প্রকৌশলী টি এস আইয়ুব, আবুল হোসেন আজাদ, আব্দুস সালাম, হাসান জহির, নুরুজ্জামান লিটন, মতিয়ার রহমান ফারাজী, মোর্তজা এলাহী টিপু, সাবিরা নাজমুল মুন্নী, মশিয়ার রহমান, সিরাজুল ইসলাম, কাজী আজম, এম তমাল আহমেদ, আসারুল হক রানা, ইঞ্জিনিয়ার রবিইল ইসলাম, মোস্তফা আমির ফয়সাল, রাজেদুর রহমান সাগর, কামরুজ্জামান বাপ্পী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ও বক্তৃতা দেন।
এই কর্মশালার দ্বিতীয়ার্ধে দুপুর ৪ টায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন তারেক রহমান। কর্মশালায় যশোর জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ৮শতাধিক নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
তারেক রহমান বলেন, বিগত দিনে পতিত স্বৈরাচার দেশকে সর্বদিক দিয়ে ধ্বংস করে দিয়েছে। বর্তমান অর্ন্তবতী সরকারের প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনুস তো বলেছেন বিগত সরকার কিভাবে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। আমাদের সকলের দায়িত্ব যার যার অবস্থান থেকে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করা।
তিনি বলেন জনগণের আস্থা অর্জন করতে না পারলে আগামীর স্বপ্নের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়। প্রশাসন, ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের মাধ্যমে পতিত স্বৈরাচার দেশকে পেছনের দিকে নিয়ে গিয়েছিল। তারা গালভরা উন্নয়নের গল্প করে দেশকে পরনির্ভরশীল করে তুলেছিল। দেশের আইটি খ্যাত, ব্যাংক বীমাসহ সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের জনগণ বিএনপির ওপর আস্থা রাখতে চাইছে। এই আস্থা যেসব নেতাকর্মী নষ্ট করতে চাইবে তাকে দলের পক্ষ থেকে বহিষ্কার করা হবে এবং এখানে আমাদের স্বার্থপর হতে হবে। গত ১৭ বছরে অনেক ত্যাগের মধ্য দিয়ে আমরা আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।
তিনি বলেন, এখন আপনি কোথাও গেলে জনগণ সালাম দেয় কিন্তু আপনি যদি এমন কোনো কাজ করেন সে যদি আপনার কাছ থেকে সরে যায় তাহলে আপনি কিসের নেতা! মানুষ কিন্তু এখন অনেক সচেতন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের জন্য দলের প্রতিটি নেতাকর্মীকে দফা ওয়ারী মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। মানুষের আস্থা অর্জনে কাজ করতে হবে। মেধার মূল্যায়ন করা হবে। বিগত ১৫ বছরে পতিত স্বৈরাচার মেধাবীদের আলাদা গোত্রে ফেলে দেশকে মেধাহীন করে পেশীশক্তির মহড়া করে দেশকে পেছনের দিকে ঠেলা দিয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও দেশে আজ পর্যন্ত কৃষকদের কোনো ডাটাবেজ নেই। ভবিষ্যতে এটা তৈরী করে দেশকে কৃষিতে স্বয়ংসম্বর করে গড়ে তোলা হবে।
তিনি আরও বলেন, দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সামাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র ও সমাজ গড়ে তুলতে হবে।
নির্বাচন প্রসঙ্গে তারেক রহমান বলেন, ভবিষ্যতে আমাদের প্রায় ১ কোটি প্রবাসীকে ভোটিং পাওয়ারের মধ্যে আনতে কাজ করছে বিএনপি। ভবিষ্যতে দল রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেলে এই বিষয়ে আরো অনেক পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করবে।
তিনি বলেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ১ কোটি প্রতিবন্ধীকে নানাভাবে সহায়তার মাধ্যমে সমাজ ও উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্ত করা হবে।
দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধিতে নতুন নতুন পরিকল্পনা নিয়ে বিএনপি কাজ করছে। দেশে বিরাজমান বাজার সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহবান জানান।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় যশোরে বিএনপির রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি শীর্ষক কর্মশালার উদ্বোধন করেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত।
এ সময় অমিত বলেন, বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে মানুষ। ধর্মীয় বিশ্বাস বা রাজনৈতিক দর্শনের কারণে কাউকে বিভাজিত করা হবে না এমন বাংলাদেশের প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণে কাজ করছে তারেক রহমান। বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তার হাত শক্তিশালী না করলে সেটা সম্ভব হবে না। এজন্য আজকে বিএনপির রাষ্ট্র সংস্কারের ৩১ দফা নিয়ে প্রশিক্ষণ এবং সকলকে তার হয়ে কাজ করতে হবে।