বিশ্বখ্যাত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সোমবার (২৭ জানুয়ারি) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দাবি করেছে যে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি গুম এবং হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবেদনটি ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভ্যুলুশন-এ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক।
এইচআরডব্লিউর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম আযমের ছেলে, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আমান আযমীকে গোপন কারাগারে আটকে রেখে তাকে হত্যার জন্য পরামর্শ দেন।
একজন সেনা কর্মকর্তার বরাতে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শেখ হাসিনা আযমীর শারীরিক অসুস্থতা সম্পর্কে জানতেন এবং তার মুক্তির বিষয়ে বারবার প্রশ্ন করা হলেও শেখ হাসিনা তা প্রত্যাখ্যান করতেন। এমনকি এক সময় তাকে হত্যার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে গুমের শিকার ৩ হাজার ৫০০ মানুষের নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের শেখ হাসিনার শাসনামলে গুম করা হয়েছে। এই গুমের সাথে সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, শেখ হাসিনা এবং তার সরকার এই গুমের বিষয়গুলো জানতেন এবং তা প্রকাশ হতে দেওয়া হয়নি।
এছাড়া, প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার শাসনামলে নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী বিরোধী দলের নেতাকর্মী, সাংবাদিক, সমালোচক ও মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নির্যাতন, মিথ্যা মামলা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, খেয়ালখুশি মতো গ্রেপ্তার এবং জোরপূর্বক গুমের ঘটনা ঘটিয়েছে। এসব ঘটনার মাধ্যমে সরকার নিরাপত্তা বাহিনীকে দমন-পীড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে।
প্রতিবেদনে গুম এবং নির্যাতনের ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের কমিশন গঠনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। এই কমিশন গঠনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের সময়কার গুম এবং নির্যাতনের বিষয়গুলোর তদন্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
এই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বন্দিদের জোরপূর্বক গুমের শিকার হয়ে মুক্তি পাওয়া তিনজন- মাইকেল চাকমা, মীর আহমেদ বিন কাসেম আরমান এবং আবদুল্লাহিল আমান আযমী তাদের নির্জন কারাগারের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
তাদের মুক্তির পর তারা জানিয়েছেন যে, গোপন কারাগারে অনেক বন্দি ছিল এবং তারা সেখানে অত্যন্ত খারাপ শর্তে ছিল।