গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের এনার্জি ইনফরমেশন অ্যাডমিনিস্টেশন (ইআইএ) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বাংলাদেশের এলএনজি (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) আমদানি বাড়ছে। বিশেষ করে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। ২০২৪ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ২৬ হাজার ১১০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানি করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬,৩২৮ মিলিয়ন ঘনফুট এবং অক্টোবরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯,৯১৮ মিলিয়ন ঘনফুটে।
ইআইএ’র প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ প্রথম ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি আমদানি শুরু করে। পরবর্তীতে ২০২২ সালের রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাজারে এলএনজির দাম বেড়ে গেলে বাংলাদেশ এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়। তবে ২০২৩ সালের পর, বাজারে এলএনজির দাম কমতে শুরু করলে বাংলাদেশ স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি কিনতে শুরু করে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির পরিমাণ আবার বৃদ্ধি পায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এলএনজি কেনার বিষয়টি শুধুমাত্র একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত এবং এটি ‘জিওপলিটিক্স’-এর অংশ নয়। তারা বলেন, বর্তমান বিশ্ব বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো কম দামে এলএনজি বিক্রি করছে এবং বাংলাদেশ সেই সুবিধা গ্রহণ করছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ভবিষ্যতে যদি নন-বাইন্ডিং চুক্তি অনুযায়ী এলএনজি আমদানি করা হয়, তখন এটি গেট পলিটিক্সের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচিত হতে পারে।
এছাড়া, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সম্প্রতি মার্কিন কোম্পানি আর্জেন্ট এলএনজির সঙ্গে ৫০ লাখ টন এলএনজি আমদানির জন্য নন-বাউন্ডিং চুক্তি করেছে। জ্বালানি ও টেকসই উন্নয়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন জানিয়েছেন, মার্কিন এলএনজি আমদানি বাড়ানো স্বাভাবিক, কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে কম দামে এলএনজি পাওয়া যাচ্ছে।
তবে বাংলাদেশ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে, তারা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের এলএনজি বাজারে বিশেষ বিধান বাতিল করে এলএনজি কেনা শুরু হয়। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারের দরপত্রের মাধ্যমে এলএনজি কেনার কারণে মার্কিন কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজি কেনা হয়।
এদিকে, এলএনজি আমদানি বৃদ্ধির পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজির দামও বাড়ছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরে স্পট মার্কেটের প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) এলএনজির দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা বাংলাদেশের আমদানির ব্যয় বাড়িয়ে দিয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের এলএনজি আমদানির এই প্রক্রিয়া এবং জিওপলিটিক্যাল প্রভাব নিয়ে আরও আলোচনা হতে পারে, তবে এই মুহূর্তে এটি একটি ব্যবসায়িক সুবিধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।