যশোরের শার্শা উপজেলার উলাশী জেলে পাড়ায় দুর্বৃত্তদের অতর্কিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জেলে পাড়ার দুই জেলেকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। এ ঘটনায় উলাশী জেলে সম্প্রদায় তাদের নিরাপত্তার জন্য শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শার্শা থানা ইনচার্জ ও শার্শা উপজেলা বিএনপি বরাবর সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গত রবিবার (২৬ জানুয়ারি) রাতে শার্শার উলাশী গ্রামে। এ ঘটনায় উলাশী জেলে পাড়ায় আতংক বিরাজ করছে। তারা আবারো তাদের উপর নতুন করে হামলা হওয়ার আশংকায় রয়েছে।
তাদের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, তারা গত ৩ বছর ধরে উলাশী গ্রামের ১৮ একরের একটি বদ্ধ বেত্রাবতি জলাশয় একটি সমিতির মাধমে সরকারের নিকট থেকে বাৎসরিক লিজ নিয়ে মৎস চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। সেই সুবাদে নতুন করে আবারো জলাশয়টি ইজারা নেওয়ার জন্য জেলে সমিতি নতুন করে অনলাইনের মাধ্যমে সিডিউল জমা দেয়। এর আগে বিগত বিএনপি সরকারের আমলে উলাশী সাখাওয়াত হোসেন, পরান, বদিউজ্জামান, বাবলু জিহাদ ও আওয়ামী লীগ আমলে মিলন মেম্বর এ বেত্রাবতি জলাশয়টি মৎস চাষ করতো।
অভিযোগে আরও জানা যায়, উলাশী জেলে সম্প্রদায় নতুন করে তাদের মৎস চাষের জন্য উক্ত জলাশয়টি ইজারা নিতে সিডিউল ক্রয় করে অনলাইনের মাধমে জমা দেয়। সিডিউল জমা দেওয়ার খবর শুনে উত্তেজিত হয় উলাশী গ্রামের একদল দুর্বৃত্ত।
এরপর রবিবার বিকালে ঐ দুর্বৃত্তরা উলাশী গ্রামের মৃত দ্বীন মোহাম্মদ এর ছেলে ইউপি সদস্য বদিউজ্জামান (৫৫), মৃত মতিয়ার রহমানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (৫৮), মৃত করিম মেম্বরের ছেলে আবু বক্কর পরান (৬০), জিহাদ আলী (৫০), মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে উলাশী মাধমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বাবলুর রহমান (৫০) এর নির্দেশে রফিকুল (৪৫), তাজউদ্দিন লেটা (৪৮), আসাদুল (৪৫) ও মফিজুরের নেতৃত্বে ১২টি মোটরসাইকেল যোগে জেলে পাড়ায় হামলা চালায়।
এ সময় তারা জেলে সম্প্রদায়ের সবাইকে হুমকি, ভয় প্রদর্শন ও অশ্লিল ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর দুর্বৃত্তরা উলাশী জেলে পাড়ার মৎসজীবী সমিতির সভাপতি বিন্দা কুমার ও সাধারণ সম্পাদক উত্তম মাস্টারকে জোরপূর্বক উলাশী বাজারে ইউপি সদস্য বদিউজ্জামানের স্থায়ী বিচারালয়ে তুলে নিয়ে আসে। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে বসে থাকা জিহাদ আলী, রফিকুল, আশাদুল, মফিজুর উত্তেজিত হয়ে সভাপতি বিন্দা কুমার ও সাধারণ সম্পাদক উত্তম মাস্টারকে বেধড়ক মারপিট করে। তাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক উলাশী বাজারে ইউপি সদস্য বদিউজ্জামান কেড়ে নেয়া সিডিউল এর কাগজ। এ সময় বদিউজ্জামান মেম্বর, সাখাওয়াত হোসেন, আবু বক্কর পরান ও বাবলু মাস্টার জেলেদের ইজারা নেওয়া ঐ জলাশয় ছেড়ে দিতে হুমকি দেয়। অন্যথায় তাদের পরিণাম ভালো হবে না বলে হুশিয়ারি দেন।
এই ঘটনায় উলাশী জেলেপাড়ার ২৭টি পরিবার লিখিতভাবে তাদের জীবনের নিরাপত্তা পেতে ও তাদের একমাত্র জীবিকা নির্বাহের জলাশয়টি কেড়ে না নেওয়ার জন্য মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) শার্শা উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শার্শা থানা ইনচার্জ ও শার্শা উপজেলা বিএনপি বরাবর লিখিতভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অভিযোগ তুলে বিচার দাবি করেছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে উলাশী গ্রামের বিএনপির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে ঘাপটি মেরে থাকা ও আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে চলা ব্যক্তিরা এখন বিএনপি সেজে বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। তাদের অত্যাচার, চাঁদাবাজি, সাধারণ মানুষের উপর জুলুম নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। এদের অন্যায় কাজের কারণে দলের সাধারণ নেতা কর্মিরা বিএনপি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শার্শা থানার অফিসার ইনচার্জ রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।