ময়মনসিংহ সদর উপজেলা ভাবখালী ইউনিয়নের একটি মাজারের ৫০তম ওরস অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছেম
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) স্থানীয় মুসল্লিদের একটি পক্ষ ওরসে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করে আয়োজন প্রতিহতের ঘোষণা ও থানায় অভিযোগ দিয়েছে।
ময়মনসিংহের সদর উপজেলার ভাবখালী ইউনিয়নের চকবন পাথালিয়া গ্রামের আউলিয়া বাজারে হজরত শাহ নেওয়াজ আলী ফকির (র.) এর মাজারে ওই ওরসের আয়োজন চলছে। এখানে ২৯ থেকে ৩১ জানুয়ারি এই তিন দিনব্যাপী ৫০তম বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ওরসের নামে বিদাত ও শিরক করা হয় এমন দাবি করে গত ১৯ জানুয়ারি স্থানীয় কিছু কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও মসজিদের ইমামেরা মাজারের লোকজনকে গিয়ে ওরস বন্ধ করার দাবি জানান। এ সময় মাজারের লোকজন তাদের কাছে গানবাজনা বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। এরই মধ্যে স্থানীয় ভাবখালী বাজারে ইত্তেফাকুল উলামা ও ভাবখালী ঐক্য উলামা পরিষদের ব্যানারে গত শুক্রবার বিকেলে মানববন্ধন করেন মুসল্লিরা। ওরস বন্ধের দাবিতে তাঁরা থানায় একটি আবেদনও করেন।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) মাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পাশের জমিতে দোকানপাট ও নাগরদোলা বসানোর প্রস্তুতি চলছে। মাজারের সামনে বড় একটি তোরণ করা হয়েছে। মাজারের কিছু স্থানে রং করছেন কয়েকজন শ্রমিক। মাজারের ভেতরে কোরআন তিলাওয়াত করছেন একজন ভক্ত। মাজারের পাশে জামে মসজিদ এবং একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা।
ঢাকা থেকে আসা একজন ভক্ত বলেন, ‘৪০ বছর ধরে এই মাজারের মাহফিলে আসি; কিন্তু এবারের মতো পরিস্থিতি আর কখনো হয়নি। এখানে অন্যায় কিছু হয় না।
মাজার কমিটির সদস্য স্থানীয় মনির উদ্দিন জানান, ওরস উদযাপনে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে ৫ জানুয়ারি লিখিতভাবে আবেদন করা হয়। এত বছর ওরস উদযাপনে কোনো বাঁধা আসেনি; কিন্তু এবার স্থানীয় কয়েকজন হুজুর এটি বন্ধ রাখতে বলছেন।
মাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম ফকির বলেন, ‘৫০ বছর ধরে ওরসটি চলছে। দেশজুড়ে ওরস হলেও এখানে ওরস বন্ধের পাঁয়তারা করছেন হুজুররা।’
উত্তেজনার একপর্যায়ে শনিবার দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান। মাজার কমিটির লোকজন এবং ইত্তেফাকুল উলামার লোকজন ওই বৈঠকে ছিলেন। বৈঠকে ওরসের নামে বাজার, গানবাজনা ও অশ্লীলতা হবে না বলে আশ্বাস দেন মাজারের লোকজন।
ইত্তেফাকুল উলামার ভাবখালী ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মোবারক হোসেন বলেন, মাজারে ওরসের নামে সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হয়। সেখানে মাদক, জুয়া ও গানবাজনা হোক তারা চান না। শুধু জিকির ও কোরআন তিলাওয়াত করতে পারবে। যদি এর ব্যত্যয় হয়, বিষয়টি প্রশাসন দেখবে বলে তাদের জানিয়েছেন।
কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শফিকুল ইসলাম খান জানান, ওরসকে ঘিরে উত্তেজনা তৈরি হলে দুই পক্ষকে নিয়ে থানায় আলোচনা হয়। গানবাজনা, জুয়া না হলে হুজুরদের কোনো আপত্তি নেই বলে প্রতিশ্রুতি দেন। বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের নজরদারি থাকবে।
উল্লেখ্য, এর আগে কোতোয়ালি মডেল থানার বিপরীতে মাত্র ৫০ গজ দুরে কালু শাহ মাজারে কাওয়ালী অনুষ্ঠান অচলাবস্থায় বড় মসজিদ থেকে হুজুরদের একটি দল গিয়ে ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের সামনে ঘটে যাওয়া এই ঘটনায় হুজুরদের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত হয়েছে।