ক্রোয়েশিয়ায় কাজের অনুমতিপত্র নিয়ে সেনজেনভুক্ত অন্য দেশে অবৈধভাবে কাজ করার অভিযোগে বাংলাদেশিদের জন্য নতুন ভিসা ও কাজের অনুমতি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এর কড়া প্রতিবাদ ও বেআইনি অভিবাসন বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ক্রোয়েশিয়া সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলেছে, যার ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারে সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্রোয়েশিয়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত তারেক মোহাম্মদ সম্প্রতি এক চিঠির মাধ্যমে শঙ্কার কথা জানিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন যে, জরুরি ভিত্তিতে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার প্রয়োজন যাতে বাংলাদেশের নাগরিকদের অভিবাসন কার্যক্রমে অনিয়ম বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
চিঠিতে রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ২০২৪ সালে ক্রোয়েশিয়া বাংলাদেশের ১২ হাজার ৪০০ নাগরিককে কাজের অনুমতিপত্র ও ভিসা দিয়েছে, কিন্তু এর মধ্যে ৮ হাজার কর্মী এখনও সেখানে পৌঁছায়নি। অন্যদিকে, ৪ হাজার ৪০০ ব্যক্তির মধ্যে প্রায় অর্ধেক দেশে না গিয়ে অন্য সেনজেনভুক্ত দেশে চলে গেছে এবং অবৈধভাবে কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই বিষয়টি নিয়ে ক্রোয়েশিয়া সরকারকে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং বেআইনি অভিবাসন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নিতে বলেছে।
ক্রোয়েশিয়া সরকার এখন বাংলাদেশিদের জন্য কাজের ভিসা প্রদান বন্ধ করতে যাচ্ছে এবং দেশটি শিগগিরই এই সিদ্ধান্তের ঘোষণা করবে। রাষ্ট্রদূত তারেক মোহাম্মদ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, বাংলাদেশের শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এটি দীর্ঘদিনের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বর্তমানে ক্রোয়েশিয়ায় ৬ থেকে ৭ হাজার বাংলাদেশি কর্মী কাজ করছে, যারা প্রধানত নির্মাণ খাতে, রেস্তোরাঁয় এবং খাবার সরবরাহের কাজে নিয়োজিত। তবে বাংলাদেশের নাগরিকরা সেখানে পৌঁছানোর পর অবৈধভাবে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন, যা ক্রোয়েশিয়ার জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিকে, একই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোও, যেমন রোমানিয়া, সার্বিয়া এবং হাঙ্গেরি, যেখানে বাংলাদেশের শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়ছে। এসব দেশে রিক্রুটিং এজেন্সির অপতৎপরতা এবং বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে ভিসা প্রাপ্তির হার কমে গেছে।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারে দেশের সুনাম রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য তাগিদ দেওয়া হয়েছে।