বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ সহায়তা বন্ধের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের ভবিষ্যৎ। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (ইউএসএইড) কর্তৃক ৯০ দিনের জন্য অর্থ সহায়তা স্থগিত করার ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও সুশাসন সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়নে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এছাড়া, এ সিদ্ধান্তের কারণে বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন দেশি-বিদেশি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের হাজার হাজার বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সুবিধাভোগী। তবে, মানবিক সহায়তার দিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা কিছুটা হলেও সংকট প্রশমিত করবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ৯০ দিনের এই স্থগিতাদেশের পর যদি বাংলাদেশে মার্কিন অর্থায়নে কোন ধরনের সুনজর না থাকে, তাহলে তা দেশের উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য একটি বড় বিপদ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অর্থনীতিবিদ এবং পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেছেন, “এই সহযোগিতা বন্ধ হলে এর ক্ষতির পরিমাণ হবে ব্যাপক। তবে, বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হল, ৯০ দিনের পর যদি মার্কিন সহায়তা কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে উন্নত দেশগুলোও একই পথে হাঁটতে পারে।”
গত শনিবার, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর, ইউএসএইড বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে সহযোগিতা স্থগিত করে। এই ঘোষণার ফলে, বাংলাদেশের বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা কার্যক্রম বন্ধ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে, প্রকল্পের খরচ কমানোর জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর আন্তর্জাতিক সাহায্য খাতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদান করে, এর মধ্যে বাংলাদেশ ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ৪৪৯ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। বিশেষত, রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়ানোর পর, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বাংলাদেশে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সহায়তা কমে যেতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান বলেন, “এই স্থগিতাদেশের প্রভাব সরাসরি গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং সার্ভিস ডেলিভারির ক্ষেত্রে পড়বে। এটি বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ।”
তবে, কিছুটা আশা দেখিয়ে সরকারের মুখপাত্র অপূর্ব জাহাঙ্গীর এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, “বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বন্ধ হবে না, যা কিছুটা হলেও মানবিক সংকট নিরসনে সহায়তা করবে।”