ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে কার্যকর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ রঙিন চাল নিয়ে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের একদল গবেষক। তাদের গবেষণায় উঠে এসেছে, রঙিন চাল শুধু পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ নয়, এটি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির। তিন বছরের গবেষণায় তাঁর নেতৃত্বে এই সাফল্য অর্জিত হয়েছে। গবেষক দলে আরও ছিলেন অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২, স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস এবং সাগরিকা খাতুন।
গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে অধ্যাপক ড. মো. ছোলায়মান আলী ফকির বলেন, “রঙিন চাল, বিশেষ করে লাল ও কালো রঙের চাল, পুষ্টিগুণে সাদা চালের তুলনায় অনেক এগিয়ে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কালো চালে জিঙ্ক এবং আয়রনের পরিমাণ সাদা চালের তুলনায় ২-৩ গুণ বেশি। কালো চালের প্রতি ১০০ গ্রামে ১১২০ থেকে ৭০৩৫ মিলিগ্রাম অ্যান্থোসায়ানিন থাকে, যেখানে সাদা চালে এর পরিমাণ খুবই নগণ্য। কালো চালে মোট ফেনল কন্টেন্ট থাকে প্রতি গ্রামে ৭ থেকে ১০ মিলিগ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি প্রায় নেই বললেই চলে। একইভাবে কালো চালে মোট ফ্লাভোনয়েড কন্টেন্ট প্রতি গ্রামে ৫.০ থেকে ৬.৫ মিলিগ্রাম, যেখানে সাদা চালে এটি প্রতি গ্রামে ৩.০ থেকে ৪.৫ মিলিগ্রাম। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, আঁশ, আয়রন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্থোসায়ানিন নামক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
রঙিন চালের পুষ্টিগুণের বিষয়ে গবেষকরা জানান, এই চালের বাইরের আবরণে অ্যান্থোসায়ানিন এবং অন্যান্য ফাইটো-কেমিক্যাল উপাদান থাকে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে কার্যকর। কালো চালের ব্রাণে সাদা চালের চেয়ে ২-৩ গুণ বেশি আয়রন ও জিংক পাওয়া গেছে। এই চাল দেখতে যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি এটি খিচুড়ি, বিরিয়ানি, মুড়ি, চিড়া এবং পিঠা তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
অধ্যাপক ড. ছোলায়মান আলী জানান, রঙিন চালের চাষ সাধারণ ধানের মতোই সহজ। এটি আমন এবং বোরো মৌসুমে চাষ করা যায়। দোআঁশ থেকে কাদামাটি পর্যন্ত সব ধরনের জমিতে এই ধান ভালো ফলন দেয়। সঠিক পরিচর্যা ও সার ব্যবহারে ফলন প্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন টন পর্যন্ত হতে পারে।
তবে তিনি আরও বলেন, “সাধারণ সাদা ধানের তুলনায় রঙিন চালের ফলন কিছুটা কম হলেও এর বাজারমূল্য বেশি। তবে পাখি এবং রোগবালাইয়ের প্রতি এটি কিছুটা সংবেদনশীল। তাই উন্নত জাত উদ্ভাবন ও আধুনিক কৃষি ব্যবস্থাপনা জরুরি।
গবেষণায় সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর হোসেন-২ বলেন, “রঙিন চালের পুষ্টি উপাদান মূলত বাইরের আবরণে থাকে। আধুনিক মিলে ছাঁটাইয়ের ফলে কিছু পুষ্টিগুণ হারাতে পারে। তবে ঢেকির মাধ্যমে চাল তৈরি করলে পুষ্টিগুণ প্রায় অক্ষুণ্ন থাকে।
গবেষক দলের দাবি, রঙিন চাল দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি পুষ্টিহীনতা ও রোগ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন এবং ব্যাপক চাষাবাদে এটি দেশের কৃষি খাতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলতে পারে।