বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ১৬ জুলাই রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘাতের সময় আবু সাঈদের মৃত্যু হয়। তার মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে নানা জল্পনা। এদিকে তার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন শেয়ার করে অনেকে বলেছেন, মাথায় ভারী কিছুর আঘাতে তার মৃত্যু হয়েছে।
তবে আবু সাঈদের মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে। তার ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলছেন, গুলির কারণে মাল্টিপল অর্গান হেমারেজে তার মৃত্যু হয়েছে। অর্থাৎ গুলির কারণে শরীরের অনেকগুলো অঙ্গে রক্তক্ষরণ থেকে তার মৃত্যু হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাঈদের মুখ থেকে ঊরু পর্যন্ত ছিল ছররা গুলির চিহ্ন। ছররা গুলি ঢুকে তাঁর শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অংশে গর্ত তৈরি করেছিল। এ কারণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। তবে তাঁর মাথার বাঁ দিকেও আঘাতের কারণে রক্তজমাট ছিল।
আবু সাঈদের মাথায় আঘাতের বিষয়ে জানতে চাইলে রাজিবুল ইসলাম বলেন, তাঁর মাথার বাঁ দিকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সেটি তিনি পড়ে গিয়ে বা পারিপাার্শ্বিক অন্য কারণে হতে পারে। তবে এটি মৃত্যুর কারণ নয়। তাঁকে গুলি করা না হলে তাঁর মৃত্যু হতো না।
ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ঘিরে ছড়ানো তথ্যগুলোকে উড়িয়ে দিয়ে এই চিকিৎসক বলছেন, “এখন তো ভিউয়ের যুগ, ভিউ পেতে অনেকে অপতথ্য ছড়াচ্ছেন।”
ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের কর্মসূচি চলাকালে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কে পুলিশ আবু সাঈদকে খুব কাছ থেকে গুলি করে। আর আবু সাঈদ এক হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে বুক পেতে দেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি লুটিয়ে পড়েন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের পুলিশ কর্তৃক গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন শেখ হাসিনা।