ঢাকা ১২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র নিখোঁজের নয়দিন পর পরিত্যক্ত ডোবায় লাশ উদ্ধার লালপুরে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে জমি দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৪ নারীসহ আহত ১০, আশঙ্কাজনক ১ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৯৯টি ককটেল ও ৪০টি পেট্রোল বোমা উদ্ধার বগুড়ায় করতোয়া নদীর ধারে মুখ ঝলসানো অর্ধগলিত লাশ পিরিজপুরে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে চাঁদা দাবি ও প্রাণনাশের হুমকি: অভিযুক্ত বিএনপি নেতার ছেলে লালপুরে আইনজীবীর বাড়িতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, ৩জন আহত বগুড়ায় ‘লাশ উত্তোলনের নামে’ প্রতারণা, তিন ভাই গ্রেপ্তার সিংড়ায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী পলকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা সুনামগঞ্জের বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস জেলা শহরের কাছাকাছি স্থাপনের জন্য ৬দফা দাবিতে সংবাদ সম্মেলন পাংশায় বসত ঘরের আড়ার সাথে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে যুবকের আত্মহত্যা কাবিখা প্রকল্পে কাগজে কলমে উন্নয়ন, মাঠে দুর্নীতি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা সেমিনার ও ফ্রি স্ক্রিনিং ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত

নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়নের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি, ১৯৭১ সালের এই দিনে শহীদ হন তিনি

শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৩১ শে জানুয়ারি অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্কুল শিক্ষক দিগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য এই অঞ্চলের একজন নামকরা আয়ুবের্দিক চিকিৎসক এবং মাতা রাজলী ভট্টাচার্য একজন আদর্শ গৃহিনী ছিলেন। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন। ছোট ভাই বোনেরা হচ্ছেন শক্তিপদ ভট্টাচার্য, দিবাকর ভট্টাচার্য, কল্যাণী ভট্টাচার্য, যুথী ভট্টাচার্য এবং বাংলাদেশে একমাত্র উত্তরাধিকারী প্রীতিলতা ভট্টাচার্য।

পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে অনুদ্বৈপায়নের উপর অনেক আশা নিয়ে তাকিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। ১৯৫৬ সালে নবীগঞ্জ যোগল কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে আজও তার সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন নবীগঞ্জ যোগলকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন আহমেদ, কানু বণিক, মকসুদ আলী, অনিল বণিক, আব্দুল হাই, কৃষ্ণ দেবনাথ, অনিমা রাণী দাশ, আশালতা দে, ভাগ্য রাণী বণিক প্রমূখ।

আলাউদ্দিন আহমদ সহপাঠী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য সম্পর্কে বলেন, “অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য চলাচলে ছিল খুবই সাদাসিধে। সবসময় একটু অগোছালোভাবে থাকতো। নানা বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে স্যারদের সাথে তর্কে লেগে যেত। তখন ছিল ফাউন্টেন পেনের যুগ। অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের শার্টের পকেটে সবসময় কলমের কালি লেগে থাকত। এ নিয়ে তাকে আমরা কথাও শোনাতাম। আমরা সবাই যখন স্কুলের টিউবওয়েলে পানি খেতে যেতাম, তখন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য পানি খেত না। ওর ধারনা ছিল অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে পানি পান করা ঠিক না। আমি পুলতিক হই ওর খোলস পাল্টানো দেখে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, বাড়িতে এসেছে। আমার বাড়িতে এসে আমাকে বলছিল, তোরা ভাল মাংস রাঁধতে জানিস, আজ তোদের বাড়িতে খাবো।”

ওর পরিবর্তনের কথা জানতে চাইলে অনুদ্বৈপায়ন আমাকে হেসে হেসে বলেছিল, “আলাউদ্দিন, আগে ছিলাম ব্রাহ্মণ, এখন হয়েছি মানুষ।” আমি খুবই ভাগ্যবান যে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের বন্ধু ছিলাম।

১৯৬১ সালে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য গণিত এবং সংস্কৃত বিষয়ে লেটার মার্কসহ ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন। পরে সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন মুরারী চাঁদ কলেজের শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসে। সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন তপন কান্তি ধর, রনবীর দত্ত, অনিল বণিক, সুভাস চন্দ্র, আদিত্য, দিপ্তেন্দু চক্রবর্তী, শক্তিপদ ঘোষ, মকলুকুর চৌধুরী।

সেই সময়ে ছাত্রবাসে ছিলেন এমসি কলেজের ভূতপূর্ব অধ্য শ্রী নিবাস দে। স্মৃতি রোমন্তনে শ্রী নিবাস দে বলেন, “একই স্থানে বাড়ি হওয়ার সুবাদে আমার সঙ্গে অনুদ্বৈপায়নের ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশি। কোনো সমস্যা হলে আমার রুমে আসতো। দাদা বলে সম্বোধন করতো। বইয়ের প্রতি তার নেশা ছিল বেশি। ১৯৬৩ সালে তিনি ইন্টামিডিয়েটে প্রথম বিভাগে মেধা তালিকায় ১১তম স্থান অধিকার করেন। এরপর অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। থাকতেন জগন্নাথ হলে।

১৯৬৬ সালে পদার্থবিদ্যা ভিাগে প্রথম শ্রেণিতে ৩য় স্থান অধিকার করে বিএসসি সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নবপ্রতিষ্টিত ফলিত পদার্থ বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে ২য় স্থান অধিকার করে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরের বছরই ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। একই বছর তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবেও নিযুক্তি পান। পদার্থবিদ্যায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের তীব্রতা ছিল তাঁর বেশি। তাই বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে গবেষণায় যেতে চেয়েছিলেন।

১৯৭০ সালে বাড়িতে মাকে চিঠিতে লেখেন, স্কলারশিপটা এবারও হলো না মা, অসুবিধা খুব বেশি। যাক, চিন্তার কোনো কারণ নেই। তোমর আশীর্বাদ থাকলে যতো দেরিই হোক, বিদেশ আমি যাবোই। কেউ আটকাতে পারবে না। কারণ পিএইচডি ডিগ্রিটা অনেকেই বেশি বয়সেও করে থাকে। কাজেই আমি নিজেও এজন্য চিন্তা করছি না। পরিবেশ যখন খারাপ, কষ্ট তো করতেই হবে।

অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের মেধা প্রজ্ঞার দরুন বেশিদিন অপো করতে হয়নি তাকে। কলম্বো পানের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাওয়ার জন্য তাঁর অপেক্ষা প্রায় শেষ। ফাইটের তারিখ ও সময় নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ রাতে। তাই ২০শে মার্চ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য নবীগঞ্জে বাড়িতে এসেছিলেন মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে বলে বিদায় নিতে। দু’দিন থাকেন বাড়িতে।

১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ সকাল ৭টার সময় মা-বাবাকে প্রণাম করে বাড়ি থেকে রওয়ানা হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। বের হওয়ার সময় দেশের পরিণতির জন্য তাঁর মা যখন যেতে মানা করেছিলেন, অনুদ্বৈপায়ন তখন বলেছিলেন, “মাগো দেশের প্রধান বিদ্যাপীঠের শিক্ষক হয়েও কাপুরুষের মতো বাড়িতে থাকার জন্য তোমার অনুদ্বৈপায়নের জন্ম দাওনি।” বাড়ি থেকে যাওয়ার প্রাক্কালে তাঁর সঙ্গে প্রয়াত চারু চন্দ্র দাশের বাসায় শেষ দেখা হয় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রয়াত উপাচার্য মো. হাবিবুর রহমান, কর্নেল (অব.) সি.কে দাশ, প্রয়াত মিহির কুমার রায় মিন্টু, আলাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকের সঙ্গেই।

২৫শে মার্চ সকাল ৯টার দিকে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য জগন্নাথ হলের ব্যাচেলর রুমে পৌঁছেন। ওইদিন বিকাল ৪টার সময় বন্ধু নির্মল মন্ডল দেখা করতে আসেন তাঁর সাথে। অনেক সময় আলাপ হয় তাদের মধ্যে। রাতে আবার আসার কথা থাকলেও আর আসা হয়নি। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়েছিলেন বন্ধু ও সহকর্মীদের সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে যেতে। পরদিন রাতেই স্বপ্ন পূরণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর কথা ছিল। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সব তছনছ হয়ে অনুদ্বৈপায়নকে পাড়ি দিতে হলো না ফেরার দেশে।

২৬শে মার্চ সকালে বুলেটের আঘাতে রুমের দরজা ভেঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যকে বের করে পাকবাহিনীর জওয়ানরা। অনুদ্বৈপায়নের হাত দু’টো পেছন মোড়া করে বেঁধে উপুড় করে বসিয়ে রেখেছিল এবং তাঁর সারা শরীর রাইফেলের বাঁট-বুট দিয়ে আঘাত করতে করতে অজ্ঞান করে ফেলেছিল। পরে জগন্নাথ হলের দনিবাড়ির সামনে অন্যান্যদের সাথে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। একইসঙ্গে নিহত হন বিখ্যাত দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। কিন্তু তাদের সঙ্গে থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কালী রঞ্জন শীল।

অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা স্বচক্ষে প্রতক্ষ করেন জগন্নাথ হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক পরিমল গুহ, শোভা পাল, পুস্তক বিক্রেতা ইদু মিয়া। বাসার জানালা দিয়ে দেখেছিলেন হলের গৃহশিক্ষক গোপাল কৃষ্ণ নাথ। পাক হানাদার বাহিনীর বলির পাত্র হলেন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। তাঁর অকাল মৃত্যুতে বাঙ্গালীর সংখ্যা থেকে শুধু একজন মানুষই কমে যায়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হারায় একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী শিক্ষক-গবেষক, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জবাসী হারায় একজন বুদ্ধিজীবী কৃতিসন্তান।

১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একখানা চিঠি আসে তাঁর বাবার কাছে। লোকমুখ থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে ২ হাজার টাকার চেক উত্তোলনের জন্য এ চিঠিতে উলেখ করা হয়, কিন্তু ঐ চিঠি কিংবা চেক উত্তোলন সংক্রান্ত কোনো ও তথ্য তাঁর পরিবার থেকে জানা যায়নি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. রঙ্গ লাল সেন অনুদ্বৈপায়নের মা-বাবাকে চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের পিতা দিগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে দেখা করেন। উপাচার্য মহোদয় পান দোকানদার চন্দ্র শেখর চন্দের সাক্ষ্য মতে, থানা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের পিতা-মাতাকে জীবদ্দশা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাতা প্রদান করেন।

স্বাধীনতার পর অন্যান্যের সঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের নামেও বাংলাদেশ সরকার ২ টাকা মূল্যে ডাকটিকিট বের করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জগন্নাথ হলের সংসদ ভবনের নাম রাখা হয়েছিল অনুদ্বৈপায়ন ভবন। ভবনটি আকস্মিকভাবে ভেঙ্গে পড়ায় অনেক ছাত্রের মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন নামটিও মুছে যায়। বর্তমানে আছে অনুদ্বৈপায়ন স্মৃতি পাঠক।

শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের ছোট বোন প্রীতিলতার কাছে তার বড় ভাইয়ের একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দেখে মনে হলো বয়স তেমন বেশি ছিল না। অবিবাহিত এক সুদর্শন যুবকের ছবি। কোর্ট-শার্ট-টাই পরা অবস্থায় তোলা সাদাকালো ছবি।

শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নবীগঞ্জ থানা সদর পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ-কলেজ রোডে জন্তরী গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার নামকরণ করা হয় “অনুদ্বৈপায়ন সড়ক”। যা শুধু ভেঙ্গে পড়া ফটকেই শোভা পাচ্ছে। তবে শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের স্মৃতিকে বিকশিত করতে নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ সড়কের পাশে নবীগঞ্জ কলেজ সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে গত ১৪ই নভেম্বর ২০১৬ তারিখে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর একান্ত প্রচেষ্টায় একটি মনোরম স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নবীগঞ্জ-করগাঁও সড়কে সিলেট-হবিগঞ্জ আসনের মহিলা সংরক্ষিত সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর উদ্যোগে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাই শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের নামে একটি সড়কের নামকরণ করার জন্য সরকার প্রধানের নিকট দাবী জানিয়েছেন নবীগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

জয়পুরহাটে স্কুলছাত্র নিখোঁজের নয়দিন পর পরিত্যক্ত ডোবায় লাশ উদ্ধার

Verified by MonsterInsights

নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান শহীদ বুদ্ধিজীবী অনুদ্বৈপায়নের আর বিদেশ যাওয়া হয়নি, ১৯৭১ সালের এই দিনে শহীদ হন তিনি

আপডেট সময় ১০:১১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫

হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত ব্রাহ্মণ মধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯৪৫ সালের ৩১ শে জানুয়ারি অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য জন্মগ্রহণ করেন। পিতা স্কুল শিক্ষক দিগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য এই অঞ্চলের একজন নামকরা আয়ুবের্দিক চিকিৎসক এবং মাতা রাজলী ভট্টাচার্য একজন আদর্শ গৃহিনী ছিলেন। ৩ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনিই বড় ছিলেন। ছোট ভাই বোনেরা হচ্ছেন শক্তিপদ ভট্টাচার্য, দিবাকর ভট্টাচার্য, কল্যাণী ভট্টাচার্য, যুথী ভট্টাচার্য এবং বাংলাদেশে একমাত্র উত্তরাধিকারী প্রীতিলতা ভট্টাচার্য।

পরিবারের বড় ছেলে হিসাবে অনুদ্বৈপায়নের উপর অনেক আশা নিয়ে তাকিয়েছিলেন তাঁর পরিবারের লোকজন। ১৯৫৬ সালে নবীগঞ্জ যোগল কিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণিতে ভর্তি হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। একজন মেধাবী ছাত্র হিসাবে আজও তার সুখ্যাতি রয়েছে। তাঁর সঙ্গে একই ক্লাসে পড়তেন নবীগঞ্জ যোগলকিশোর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন আহমেদ, কানু বণিক, মকসুদ আলী, অনিল বণিক, আব্দুল হাই, কৃষ্ণ দেবনাথ, অনিমা রাণী দাশ, আশালতা দে, ভাগ্য রাণী বণিক প্রমূখ।

আলাউদ্দিন আহমদ সহপাঠী অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য সম্পর্কে বলেন, “অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য চলাচলে ছিল খুবই সাদাসিধে। সবসময় একটু অগোছালোভাবে থাকতো। নানা বিষয়ে যুক্তি দেখিয়ে স্যারদের সাথে তর্কে লেগে যেত। তখন ছিল ফাউন্টেন পেনের যুগ। অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের শার্টের পকেটে সবসময় কলমের কালি লেগে থাকত। এ নিয়ে তাকে আমরা কথাও শোনাতাম। আমরা সবাই যখন স্কুলের টিউবওয়েলে পানি খেতে যেতাম, তখন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য পানি খেত না। ওর ধারনা ছিল অন্য ধর্মাবলম্বীদের সাথে পানি পান করা ঠিক না। আমি পুলতিক হই ওর খোলস পাল্টানো দেখে। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ, বাড়িতে এসেছে। আমার বাড়িতে এসে আমাকে বলছিল, তোরা ভাল মাংস রাঁধতে জানিস, আজ তোদের বাড়িতে খাবো।”

ওর পরিবর্তনের কথা জানতে চাইলে অনুদ্বৈপায়ন আমাকে হেসে হেসে বলেছিল, “আলাউদ্দিন, আগে ছিলাম ব্রাহ্মণ, এখন হয়েছি মানুষ।” আমি খুবই ভাগ্যবান যে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের বন্ধু ছিলাম।

১৯৬১ সালে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য গণিত এবং সংস্কৃত বিষয়ে লেটার মার্কসহ ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন। পরে সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন। থাকতেন মুরারী চাঁদ কলেজের শ্রীকান্ত ছাত্রাবাসে। সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন তপন কান্তি ধর, রনবীর দত্ত, অনিল বণিক, সুভাস চন্দ্র, আদিত্য, দিপ্তেন্দু চক্রবর্তী, শক্তিপদ ঘোষ, মকলুকুর চৌধুরী।

সেই সময়ে ছাত্রবাসে ছিলেন এমসি কলেজের ভূতপূর্ব অধ্য শ্রী নিবাস দে। স্মৃতি রোমন্তনে শ্রী নিবাস দে বলেন, “একই স্থানে বাড়ি হওয়ার সুবাদে আমার সঙ্গে অনুদ্বৈপায়নের ঘনিষ্ঠতা ছিল বেশি। কোনো সমস্যা হলে আমার রুমে আসতো। দাদা বলে সম্বোধন করতো। বইয়ের প্রতি তার নেশা ছিল বেশি। ১৯৬৩ সালে তিনি ইন্টামিডিয়েটে প্রথম বিভাগে মেধা তালিকায় ১১তম স্থান অধিকার করেন। এরপর অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। থাকতেন জগন্নাথ হলে।

১৯৬৬ সালে পদার্থবিদ্যা ভিাগে প্রথম শ্রেণিতে ৩য় স্থান অধিকার করে বিএসসি সম্মান ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৭ সালে তিনি নবপ্রতিষ্টিত ফলিত পদার্থ বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে ২য় স্থান অধিকার করে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এর পরের বছরই ১৯৬৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফলিত পদার্থবিদ্যা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। একই বছর তিনি জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবেও নিযুক্তি পান। পদার্থবিদ্যায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের তীব্রতা ছিল তাঁর বেশি। তাই বৃত্তি নিয়ে দেশের বাইরে গবেষণায় যেতে চেয়েছিলেন।

১৯৭০ সালে বাড়িতে মাকে চিঠিতে লেখেন, স্কলারশিপটা এবারও হলো না মা, অসুবিধা খুব বেশি। যাক, চিন্তার কোনো কারণ নেই। তোমর আশীর্বাদ থাকলে যতো দেরিই হোক, বিদেশ আমি যাবোই। কেউ আটকাতে পারবে না। কারণ পিএইচডি ডিগ্রিটা অনেকেই বেশি বয়সেও করে থাকে। কাজেই আমি নিজেও এজন্য চিন্তা করছি না। পরিবেশ যখন খারাপ, কষ্ট তো করতেই হবে।

অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের মেধা প্রজ্ঞার দরুন বেশিদিন অপো করতে হয়নি তাকে। কলম্বো পানের বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যাওয়ার জন্য তাঁর অপেক্ষা প্রায় শেষ। ফাইটের তারিখ ও সময় নির্ধারিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ রাতে। তাই ২০শে মার্চ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য নবীগঞ্জে বাড়িতে এসেছিলেন মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনকে বলে বিদায় নিতে। দু’দিন থাকেন বাড়িতে।

১৯৭১ সালের ২৪শে মার্চ সকাল ৭টার সময় মা-বাবাকে প্রণাম করে বাড়ি থেকে রওয়ানা হন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। বের হওয়ার সময় দেশের পরিণতির জন্য তাঁর মা যখন যেতে মানা করেছিলেন, অনুদ্বৈপায়ন তখন বলেছিলেন, “মাগো দেশের প্রধান বিদ্যাপীঠের শিক্ষক হয়েও কাপুরুষের মতো বাড়িতে থাকার জন্য তোমার অনুদ্বৈপায়নের জন্ম দাওনি।” বাড়ি থেকে যাওয়ার প্রাক্কালে তাঁর সঙ্গে প্রয়াত চারু চন্দ্র দাশের বাসায় শেষ দেখা হয় সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রয়াত উপাচার্য মো. হাবিবুর রহমান, কর্নেল (অব.) সি.কে দাশ, প্রয়াত মিহির কুমার রায় মিন্টু, আলাউদ্দিন আহমেদসহ অনেকের সঙ্গেই।

২৫শে মার্চ সকাল ৯টার দিকে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য জগন্নাথ হলের ব্যাচেলর রুমে পৌঁছেন। ওইদিন বিকাল ৪টার সময় বন্ধু নির্মল মন্ডল দেখা করতে আসেন তাঁর সাথে। অনেক সময় আলাপ হয় তাদের মধ্যে। রাতে আবার আসার কথা থাকলেও আর আসা হয়নি। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে গিয়েছিলেন বন্ধু ও সহকর্মীদের সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে যেতে। পরদিন রাতেই স্বপ্ন পূরণের জন্য বিদেশে পাড়ি জমানোর কথা ছিল। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সব তছনছ হয়ে অনুদ্বৈপায়নকে পাড়ি দিতে হলো না ফেরার দেশে।

২৬শে মার্চ সকালে বুলেটের আঘাতে রুমের দরজা ভেঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যকে বের করে পাকবাহিনীর জওয়ানরা। অনুদ্বৈপায়নের হাত দু’টো পেছন মোড়া করে বেঁধে উপুড় করে বসিয়ে রেখেছিল এবং তাঁর সারা শরীর রাইফেলের বাঁট-বুট দিয়ে আঘাত করতে করতে অজ্ঞান করে ফেলেছিল। পরে জগন্নাথ হলের দনিবাড়ির সামনে অন্যান্যদের সাথে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল তাকে। একইসঙ্গে নিহত হন বিখ্যাত দার্শনিক ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ও অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। কিন্তু তাদের সঙ্গে থেকে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান কালী রঞ্জন শীল।

অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যকে কিভাবে হত্যা করা হয়েছিল তা স্বচক্ষে প্রতক্ষ করেন জগন্নাথ হল সংসদের সাধারণ সম্পাদক পরিমল গুহ, শোভা পাল, পুস্তক বিক্রেতা ইদু মিয়া। বাসার জানালা দিয়ে দেখেছিলেন হলের গৃহশিক্ষক গোপাল কৃষ্ণ নাথ। পাক হানাদার বাহিনীর বলির পাত্র হলেন অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্য। তাঁর অকাল মৃত্যুতে বাঙ্গালীর সংখ্যা থেকে শুধু একজন মানুষই কমে যায়নি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হারায় একজন সম্ভাবনাময় মেধাবী শিক্ষক-গবেষক, হবিগঞ্জ-নবীগঞ্জবাসী হারায় একজন বুদ্ধিজীবী কৃতিসন্তান।

১৯৭২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত একখানা চিঠি আসে তাঁর বাবার কাছে। লোকমুখ থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট মহকুমা প্রশাসকের কাছ থেকে ২ হাজার টাকার চেক উত্তোলনের জন্য এ চিঠিতে উলেখ করা হয়, কিন্তু ঐ চিঠি কিংবা চেক উত্তোলন সংক্রান্ত কোনো ও তথ্য তাঁর পরিবার থেকে জানা যায়নি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড. রঙ্গ লাল সেন অনুদ্বৈপায়নের মা-বাবাকে চিঠি দেন। চিঠি পেয়ে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের পিতা দিগেন্দ্র চন্দ্র ভট্টাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সাথে দেখা করেন। উপাচার্য মহোদয় পান দোকানদার চন্দ্র শেখর চন্দের সাক্ষ্য মতে, থানা থেকে ডেথ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করেন। অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের পিতা-মাতাকে জীবদ্দশা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভাতা প্রদান করেন।

স্বাধীনতার পর অন্যান্যের সঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের নামেও বাংলাদেশ সরকার ২ টাকা মূল্যে ডাকটিকিট বের করেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জগন্নাথ হলের সংসদ ভবনের নাম রাখা হয়েছিল অনুদ্বৈপায়ন ভবন। ভবনটি আকস্মিকভাবে ভেঙ্গে পড়ায় অনেক ছাত্রের মৃত্যু হয়। সেই সঙ্গে অনুদ্বৈপায়ন নামটিও মুছে যায়। বর্তমানে আছে অনুদ্বৈপায়ন স্মৃতি পাঠক।

শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের ছোট বোন প্রীতিলতার কাছে তার বড় ভাইয়ের একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দেখে মনে হলো বয়স তেমন বেশি ছিল না। অবিবাহিত এক সুদর্শন যুবকের ছবি। কোর্ট-শার্ট-টাই পরা অবস্থায় তোলা সাদাকালো ছবি।

শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে নবীগঞ্জ থানা সদর পয়েন্ট থেকে নবীগঞ্জ-কলেজ রোডে জন্তরী গ্রাম পর্যন্ত রাস্তার নামকরণ করা হয় “অনুদ্বৈপায়ন সড়ক”। যা শুধু ভেঙ্গে পড়া ফটকেই শোভা পাচ্ছে। তবে শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের স্মৃতিকে বিকশিত করতে নবীগঞ্জ-ইনাতগঞ্জ সড়কের পাশে নবীগঞ্জ কলেজ সংলগ্ন রাস্তার মোড়ে গত ১৪ই নভেম্বর ২০১৬ তারিখে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরীর একান্ত প্রচেষ্টায় একটি মনোরম স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া নবীগঞ্জ-করগাঁও সড়কে সিলেট-হবিগঞ্জ আসনের মহিলা সংরক্ষিত সাবেক এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর উদ্যোগে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে। তাই শহীদ অনুদ্বৈপায়ন ভট্টাচার্যের নামে একটি সড়কের নামকরণ করার জন্য সরকার প্রধানের নিকট দাবী জানিয়েছেন নবীগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ।