বর্তমানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) প্রধান প্রকৌশলীর (চলতি দায়িত্ব) দায়িত্ব পালন করেছেন মো. আব্দর রশীদ মিয়া। এর আগে একজন দক্ষ প্রকৌশলী হিসেবে তিনি সুনামের সঙ্গে এলজিইডিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। তাঁর কর্মজীবনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ, বর্তমান বাস্তবতা, অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন এলজিইডির এই প্রধান প্রকৌশলী।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এলজিইডিতে সংস্কারের ছোঁয়া লেগেছে কিনা জবাবে প্রধান প্রকৌশলী বলেছেন, “সংস্কার অবশ্যই দরকার। আমরা যে গতানুগতিক ধারায় কাজ করে আসছি সামনে সেটির পরিবর্তন ঘটবে। টেকসই সমাধানের কথা মাথায় রেখে আমাদের কাজে ও সংস্থাগতভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। আমাদের স্বাধীনতা দরকার। পরিবর্তনযোগ্যতা দরকার। একইভাবে দায়িত্ববোধ, জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানোতে তাগিদ দিয়েছি। এগুলো আমাদের ব্যবস্থাপনার ওপর নির্ভর করতে হবে। ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সব মানুষকে একই রকমভাবে চিন্তা করাটা ঠিক হবে না। একেকজন একেক রকম হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কর্মপদ্ধতি একই রকম হলে মানুষ বদলাতে বাধ্য। সিস্টেম ডেভেলপমেন্টের (পদ্ধতিগত উন্নয়ন) বিকল্প নেই। যেমন এলজিইডির ইজিপি (ই-গভর্নমেন্ট প্রকিউরমেন্ট) সিস্টেম; যেখানে টেন্ডার হবে অনলাইনে। অফলাইনে টেন্ডারের কাগজপত্রে গরমিল করা যায়, কিন্তু অনলাইনে তা সম্ভব নয়। ইজিপিতে চাইলেও কোনো ম্যানুপুলেট (নিয়ন্ত্রণ) করা যায় না।”
এলজিইডিতে দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রসঙ্গে আব্দুর রশীদ মিয়া বলেন, “আমাদের চার স্তরের মনিটরিং হয়ে থাকে। তবু উনিশ-বিশ হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যক্তির কারণে দুর্নীতি হয়ে থাকে। জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী ভালো হলে উপজেলা প্রকৌশলীর ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ থাকে না। বড় ধরনের দুর্নীতির সুযোগ নেই। মনিটরিংয়ের আপডেট টুলসগুলো ব্যবহার করে অনিয়ম কমিয়ে আনার ব্যবস্থা নিয়েছি। এজন্য অটোমেশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট করছি। দুর্নীতি সব দেশে, সব জায়গায়ই ছিল। এটিকে সিস্টেমে বেঁধে ফেলতে হবে। মানুষকে মোটিভেট (উৎসাহ) করে কাজ হবে না।”
তিনি বলেন, “এলজিইডির মতো প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক প্রভাব সব সরকারের আমলেই থাকে। এগুলো মোকাবিলা করতে হবে।”
আব্দুর রশীদ মিয়া আরো বলেন, “ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তর থেকে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প আছে। যেখান থেকে তারা সারাদেশে ব্রীজ ও কালভার্ট নির্মাণ করে থাকে। অনেক জায়গায় নদী ও খালের মাঝখানে সেতু তৈরি করে, পরে এলজিইডির নামে চালিয়ে দেয়। সংবাদে এলেই মনে করা হয় এগুলো এলজিইডির তত্ত্বাবধানে করা। আমরা এগুলোর প্রতিবাদ করছি। আর আমাদেরও কিছু এমন চিত্র আছে, এর কারণ ভূমি অধিগ্রহণে সমস্যা। সেতুর কাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ না হওয়ায় সেতু যথাসময়ে ব্যবহারযোগ্য হয়ে ওঠে না।”
এলজিইডি সূত্র জানায়, এসব উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করতে বর্তমান সরকারের আমলে ২৯টি নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন রাস্তা নির্মাণ, পুরনো রাস্তা মেরামত, ব্রিজ, কালভার্ট ও হাটবাজার উন্নয়নের কাজ করা হবে।
১৯৮৪ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল ব্যুরো এবং পরবর্তীতে ১৯৯২ সালে অধিদপ্তরে রূপান্তরিত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। এলজিইডি সারা দেশব্যাপী পল্লী ও নগর অঞ্চলে অবকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, জনপ্রতিনিধি, উপকারভোগী, ঠিকাদার, চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক দলসমূহের সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে প্রশিক্ষণ ছাড়াও অন্যান্য কারিগরী মডেল, ম্যানুয়েল ও স্পেসিফিকেশন প্রণয়ন, এলজিইডির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকান্ড বৃদ্ধি করে থাকে।
পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে সড়ক, ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, গ্রোথ সেন্টার ও হাটবাজার উন্নয়ন, ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ, পাকা সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও পুনর্বাসন, ব্রিজ ও কালভার্ট রক্ষণাবেক্ষণ এবং সড়কে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে।
নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রাস্তা নির্মাণ, ব্রীজ ও কালভাট নির্মাণ ওরক্ষণাবেক্ষণ, ড্রেন নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, বাস টার্মিনাল ও টাউন সেন্টার নির্মাণ, বস্তিবাসী পরিবারকে পুনর্বাসন, রাস্তা রক্ষনাবেণ এবং ড্রেন রক্ষণাবেণ ও বন্যার্তদেরকে পুনর্বাসন করা হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষা অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ ও পুনঃনির্মাণ, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস নির্মাণ, পিটিআই ভবনের মেরামত ও হোস্টেল নির্মাণ এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়-কাম-সাইক্লোন শেল্টার নির্মাণ করা হয়েছে।
আর পানি সম্পদ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাঁধ পুনঃনির্মাণ, স্লুইস গেট ও রেগুলেটর নির্মাণ এবং খাল পুনঃখনন করা হচ্ছে। এলজিইডি এ সকল ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এলজিইডি অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি পল্লী ও নগর অঞ্চলে দুঃস্থ জনগণ বিশেষ করে নারীদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে।
এলজিইডি ‘রুরাল এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড রোড মেইন্টেন্যান্স প্রোগ্রাম’ এর আওতায় ৫১ হাজার ৭৪০ জন গ্রামীণ মহিলাকে ১৮০ কোটি টাকা বেতন প্রদান করা হয়। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৬৫০ জনের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদেরকে আত্মনির্ভশীল হওয়ার প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
গত বছর ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতে কী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “হ্যাঁ, বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের বন্যায় অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমন বন্যা অতীতে দেখা যায়নি। অপরিকল্পিত বসতির কারণে রাস্তার নেটওয়ার্কগুলো মাকড়সার জালের মতো ছড়িয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাটগুলো মেরামতে তিন ধাপে কাজ করা হবে। প্রথম ধাপে তাৎক্ষণিকভাবে মানুষের যোগাযোগব্যবস্থা স্থাপনে বিচ্ছিন্ন সড়কগুলো জরুরি মেরামত করছি। দ্বিতীয় ধাপে অগ্রাধিকারের সঙ্গে রাস্তাগুলো পুনর্নির্মাণ করা হবে। দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে আরও মজবুত করা যায় অর্থাৎ এই অঞ্চলের রাস্তাগুলোর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করার চেষ্টা করা। রাস্তার কাজের গুণাগুণ মান বাড়ানো। সহজে যাতে বানের তোড়ে একটি বড় অংশ ভেঙে যেতে না পারে।”
বাংলাদেশের রাস্তা পাকাকরণের হার সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করে এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী বলেন, “প্রায় ৫ হাজার অল-ওয়েদার (মহাসড়ক) সড়ক ঘিরে ওই এলাকার প্রায় ৯০ শতাংশ লোক বাস করে। যা এসডিজির (টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা) ১১.০৩ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছি। ২০৩০ সালের মধ্যে ৯৪ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা আছে। আমরা তার আগেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো। প্রথমে এলজিইডি মাটির কাজ শুরু করেছে। এরপর পাকাকরণ বাড়াতে থাকে। গ্রামে আমাদের সর্বমোট রাস্তা হলো সাড়ে তিন লাখ কিলোমিটার। এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭৪ হাজার কিলোমিটারেরও অধিক রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে। ১৬ লাখ মিটারের অধিক ব্রিজ কালভার্ট স্থাপন হয়েছে এলজিইডির তত্ত্বাবধানে। এগুলো আমাদের সম্পদ। এগুলো টেকসই করাই এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থের জোগান দরকার।”
তিনি বলেন, “অনেক রাস্তার বয়স ২০-২৫ বছর হয়েছে। এগুলো এখন মজবুত ও চওড়া করছি। এক লেনের রাস্তাকে দুই লেনে উন্নীত করছি। এক লেনের রাস্তায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। দুই লেনের ফলে উপজেলায় ট্রাফিক জ্যাম কমে আসবে। আশির দশকের প্রথম দিকে লোকাল গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরো বা এলজিইবি হয়। এরপর এলজিইডি হয়। বলা যায় এটি নতুন সংস্থা। স্বল্প লোকবল নিয়েই শুরু করে। লক্ষ্য ছিল গ্রামের হাটবাজারের সঙ্গে রাস্তার যোগাযোগ স্থাপন করা। মূলত সাধারণ মানুষ ও কৃষকদের প্রাধান্য দেওয়াই ছিল উদ্দেশ্য। উৎপাদিত পণ্যে বাজারজাতকরণের সুবিধা প্রসারিত করা।”
এলজিইডির যাত্রা প্রসঙ্গে প্রকৌশলী আবদুর রশীদ মিয়া জানান, “এলজিইডি সৃষ্টির আগে এই সুযোগ-সুবিধা একেবারেই ছিল না। আগে পণ্য উৎপাদনমুখী ছিল না। শ্রম বিক্রি করা যেত না। এক এলাকা থেকে সহজে অন্য জায়গায় গিয়ে কাজ করতে পারত না। এলজিইডি যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজলভ্য করেছে। কোনো কোনো জেলাতে এক কিলোমিটার রাস্তাও পাকা ছিল না নব্বইয়ের আগে। জোর দিয়ে বলা যায়, গ্রামীণ অর্থনীতির রূপকার হচ্ছে এলজিইডি। অর্থাৎ, আর্থসামাজিক উন্নয়নের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে এলজিইডি।”
Your thoughts are profound! I’ve been experimenting with AI Image To Music Video for music composition classes and student comprehension has dramatically improved! AI Image To Music Video transforms abstract musical concepts into visual representations that sync perfectly with audio examples. The intuitive way AI Image To Music Video connects theory to practice creates powerful learning breakthroughs!