শ্রীমঙ্গলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছোররা গুলিতে বাম চোখ হারিয়েছে রাব্বি।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে বাম চোখ হারিয়েছে শ্রীমঙ্গল বর্ডার গার্ড হাই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র মো: রাব্বি হোসেন। সুচিকিৎসার অভাবে ডান চোখও নষ্ট হওয়ার পথে।
শরীরে ৩০ টি বুলেট নিয়ে যন্ত্রনায় ছটফট করছে। কোনো মহল থেকে খোঁজ নেয়নি কেউ। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে অভাব অটনের হাল ধরতে টমটম চালিয়ে রোজগার করতো।
গত ৫ আগস্ট দেশের সাবেক স্বৈরাচারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হটাতে টমটম গ্যারেজ করে ছাত্র জনতার আন্দোলনে মিছিলে যোগ দেয় রাব্বি হোসেন। বিকেল ৩ টায় শ্রীমঙ্গল চৌমুহনার মিরাজ শপিং সেন্টারের সামনে মিছিলে যাওয়া মাত্র বন্দুকের অসংখ্য বুলেট এসে লাগে তার চোখ, গলা ও শরীরে। কন্ঠনালীতে প্রবেশ করে একটি বুলেট।
আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে শ্রীমঙ্গল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থা গুরুতর হওয়ায় সেখান থেকে রেফার করা হয় মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে। ওখানে চিকিৎসা দিয়ে তাকে পাঠানো হয় মাতারকাপন আধুনিক চক্ষু হাসপাতালে। সেখান থেকে তাকে ঢাকায় উন্নত চিকিৎসার জন্য যেতে বলা হয়। এই দুঃসময় ‘সেইভ দ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশন’ শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি মতিউর রহমান তার চিকিৎসার সাহায্যের জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।
গুরুতর অবস্থায় অপারেশন করে রাব্বির নষ্ট হয়ে যাওয়া বাম চোখ তুলে ফেলতে হয়। চিকিৎসক তার ডান চোখে লেন্স সংযোজনের পরামর্শ দেন।
রাব্বি হোসেনের কন্ঠনালী থেকে বের করা হয় ছররা গুলি। টাকার অভাবে আর চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার পরিবারের। বর্তমানে অর্থ অভাবে বিনা চিকিৎসায় ডান চোখও নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে।
মুসলিমবাগের রাব্বি হোসেনকে প্রায় ৩০টি ছররা গুলি শরীরে বহন করে চলতে হচ্ছে। ডাক্তাররা বলছেন এতো পরিমাণ গুলি তার শরীরে বের করতে গেলে শরীরের অস্তিত্ব থাকবে না।
রাব্বি হোসেন মিছিলে গিয়েছিল নতুন দেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে। শরীরে, মাথায় গুলি লেগেছে তার। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ধুকে ধুকে মৃত্যুর দিকে ধলে পরছেন, কেউ তাঁর খোঁজও নেয়নি।
রাব্বি হোসেনের মা রুনা বেগম বলেন, আমার ছেলেটা সেদিন গাড়ি বন্ধ করে মিছিলে গিয়েছিল। গুলিতে হারিয়েছে একটি চোখ। অন্যটিও চিকিৎসার অভাবে নষ্ট হওয়ার পথে। ‘সেইভ দ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশন’ ছাড়া কেউ সাহায্য সহযোগিতা করেনি। এখন আমার ছেলের চলার একমাত্র সম্বল লাঠি।
‘সেইভ দ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশন’ শ্রীমঙ্গল শাখার সদস্য আব্দুস সামাদ মাসুদ বলেন, ‘গত ৫ আগষ্ট স্বৈরাচার সরকার পতনের পর আনন্দ মিছিল চলাকালে গুলিতে আহত দক্ষিণ মুসলিমবাগ এলাকার রাব্বি হোসেন, আহমেদ রনি, বাবু আহমেদ, হামিদ মিয়াসহ ১০/১২ জনকে মানবিক কারণে উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে হাপাতালে নিয়ে যাই।’
সেইভ দ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশনের শ্রীমঙ্গল শাখার সভাপতি মতিউর রহমান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার মিছিলে গুলিতে আহত রাব্বি হোসেনকে আমাদের ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে চিকিৎসা দিয়েছি। তার আরো উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। ঐদিন ১৫/২০ জন আহত হয়েছে। তাদেরও উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন।
শ্রীমঙ্গল ২ নং ওয়ার্ড কমিশনার আব্দুর জব্বার আজাদ বলেন, ‘৫ আগষ্ট আমি আহত লোকদের চিকিৎসার জন্য আমার ভ্যান গাড়ি দিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিলাম। বন্দুকের গুলিতে আহতদের রক্তে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়।’
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ‘৫ আগষ্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহতদের চুড়ান্ত তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। আহত রাব্বি হোসেন এর বিষয় আমার জানা ছিল না, আমি খোঁজ নিবো। তার চিকিৎসার সহযোগিতা করা হবে।’