সাবেক র্যাব কর্মকর্তা ও এএসপি আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে গুম করা ব্যক্তির স্ত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তাজুল ইসলাম বলেন, “আলেপ উদ্দিন অসংখ্য গুম, খুন ও নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। এক আসামিকে গুম করে রাখার সময়ে তার বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া স্ত্রীকে রমজান মাসে রোজা ভাঙিয়ে ধর্ষণ করেন আলেপ উদ্দিন। এই ঘটনার তথ্য ও প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে।”
চিফ প্রসিকিউটর আরও জানান, আলেপ উদ্দিন বহু ব্যক্তিকে অপহরণ করে বছরের পর বছর আটকে রেখেছিল। তাদের চোখ বেঁধে, ইলেকট্রিক শক দিয়ে এবং উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতন করা হতো।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে গত সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আলেপ উদ্দিনকে নিয়ে একটি ফেসবুক পোস্ট শেয়ার করেন।
আলজাজিরার সাংবাদিক মউদুদ সুজনের ওই পোস্টে উল্লেখ করা হয়, গুম হওয়া এক স্বামী জানান, পবিত্র শবেকদরের দিন রোজা ভাঙিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। এর আগেও প্রায় তিনবার স্বামীকে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। শেষবার ধর্ষণের পর স্ত্রীর মানসিক অবস্থার অবনতি হয় এবং কিছুদিন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষক র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যার নাম আলেপ। স্বামী সবকিছু হারিয়ে যখন আলেপকে বারবার ফোন দেন, তখন আলেপ জানান, “বন্দি মেয়ে বা বন্দি পুরুষদের স্ত্রীদের সঙ্গে এমন আচরণ এখানে অলিখিতভাবে স্বীকৃত।”
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আলজাজিরার আরেক সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরও ফেসবুক পোস্ট করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ৫ আগস্ট ২০২৪ পরবর্তী পরিস্থিতিতে আলেপ উদ্দিন বেশ স্বাভাবিকভাবেই দিন কাটাচ্ছিল। তাকে এসবি থেকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে বদলি করা হয়। পরে ২০ অক্টোবর ২০২৪ তার একটি পোস্টের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে এবং তাকে বরিশাল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়। এরপর তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
জুলকারনাইন সায়ের আরও মন্তব্য করেন, “আলেপের মতো খুনি, অপহরণকারী এবং জঘন্য অপরাধে লিপ্ত অনেকেই বিভিন্ন বাহিনীতে এখনো কর্মরত রয়েছেন। তাদের চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
এই ঘটনায় আলেপ উদ্দিনের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, এরকম জঘন্য অপরাধের বিচার হওয়া উচিত সর্বাগ্রে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন অপরাধ করতে সাহস না পায়।