ঢাকা ০৪:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৩০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
৩৫ কেজি বাঘাইড় মাছ ও ১৫ কেজি মিষ্টিতে পোড়াদহ মেলা আয়নাঘর পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা যমুনা রেলওয়ে সেতুতে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএআইডি মহাপরিদর্শক পল মার্টিন বরখাস্ত শেখ হাসিনার বক্তব্য ভারতের জন্য জটিলতা সৃষ্টি করেছে: শশী থারুর বিনামূল্যে ক্যান্সার ওষুধ দেওয়ার ঘোষণা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আগামী অক্টোবরের মধ্যে জুলাই হত্যা মামলার রায়: আসিফ নজরুল পরিবেশ অধিদপ্তর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সহকারী পরিচালক বদরুন্নাহার সীমার সীমাহীন দুর্নীতি পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প: পিডি উজ্জ্বল মল্লিক ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে শত শত কোটি টাকার ক্ষতিগ্রস্ত প্লট হাতিয়ে নিয়েছে ময়মনসিংহে বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল ময়মনসিংহ জেলা মটরযান কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচনে নির্বাচিত সভাপতি সম্পাদকসহ সকলের শপদ ও দায়িত্ব গ্রহণ গাজীপুর কারাগারে কয়েদির আত্মহত্যা, তদন্ত কমিটি গঠন

কমলগঞ্জে বখাটে কর্তৃক তরুণীকে অপহরন চেষ্টা; প্রতিরোধে বখাটে আহত

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুল পড়ুয়া তরুণীকে উত্যক্ত করার অপরাধে গ্রাম্য শালিসের পূর্বদিন বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় অপহরণ করতে এসে পরিবারের সদস্যদের প্রতিরোধে গুরুত্বর আহত হয়েছে বখাটে আতাউর রহমান (২৭)। আহত বখাটে আতাউর এখন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ তরুণীর পিতা হুমায়ুনকে ফোনে ডেকে এনে উল্টো বখাটেকে আহত করার অপরাধে আটক করে মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায়।

উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের স্কুল ছাত্রীর বাবা হুমায়ুন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে রিয়া আক্তার কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। একই গ্রামের হুমায়ুনের ভাই হারুন মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রী আতাউর রহমান (৩০) পূর্বে ২টি বিয়ে করেছে এবং তাদেরকে নির্যাতন করে তালাক দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্তক্ত করে। মেয়েটি বিবাহিত চাচাতো ভাইয়ের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে। মেয়েকে উত্যক্ত করার বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ থানায় লিখিতভাবে অবহিত করে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে ২০ জানুয়ারি সকালে এলাকায় শালিস বৈঠক বসার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বখাটে আতাউর ১৯ জানুয়ারি ভোরে মোটরসাইকেলযোগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার অপর সঙ্গীদের সাথে নিয়ে তরুণীকে অপহরণ করতে হুমায়ুনের বাড়িতে যায়। এ সময় হুমায়ুন ও তার পরিবারের লোকজন আতাউর ও তার সঙ্গীদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করে। তাদের প্রতিরোধে আতাউরের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে ও আতাউরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। হামলায় আতাউর গুরুতর আহত হলে তার আত্নীয়স্বজন তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে।

স্কুল ছাত্রী রিয়ার মা বলেন, ‘ঘটনার রাতে তার স্বামী মুন্সিবাজার অবস্থান করার সময় কমলগঞ্জ থানা থেকে তাকে ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য ডেকে নিয়ে আতাউরের উপর হামলার কারণে আটক করে পরদিন মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

অপরদিকে সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে একদল সাংবাদিক সরজমিনে পরিদর্শন করতে গেলে এলাকার দিলারা বেগম, নানু মিয়া, লতিফ মিয়া ও লাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আতাউর পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। সে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির লাঠিয়াল হিসাবে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তার ভয়ে এলাকার কেউ কথা বলতে পারে না।

তারা আরো বলেন, ‘সে আগে বৃন্দাবনপুর ও রামেশ্রপুর গ্রামে ২টি বিয়ে করেছিল। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এছাড়া তার অত্যাচারে মইনউদ্দিনের পরিবার বাড়ি-ঘর ফেলে রেখে বর্তমানে গিয়াসনগর এলাকায় বসবাস করছে।

তারা বলেন, গত বছর শালিস চলাকালীন সময় তার বিরুদ্ধে কথা বলায় শালিসান ফটিক মিয়াকে বৈঠক স্থলেই চাকু দিয়ে আঘাত করে আহত করে। বর্তমানে সে বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে চলে গেছে। তাদের প্রশ্রয় আবারো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। হুমায়ুনের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় বিরক্ত করার অভিযোগে ২০ জানুয়ারি এলাকায় শালিস বৈঠক করার কথা ছিল, কিন্তুু তার আগেই সন্ত্রাসী নিয়ে তার মেয়েকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে হুমায়ুন ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত করেছে।

এদিকে আতাউরের সাথে এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াতির আলী বলেন, আতাউর খুব খারাপ লোক। এলাকায় যত অন্যায় অপকর্ম আছে সবগুলোর সাথে সে জড়িত। তার নেতৃত্বে সব ধরনের কাজ এ এলাকায় হয়। আমরা বিচারি হয়েও তার বিচার করতে পারি না। সে আগে যুবলীগ করতো এখন বিএনপি করে। আমরা চাই পুলিশের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখুক।

তবে তিনি বলেন, আইন হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি হুমায়ুনের। তাদের আতাউরকে মারা ঠিক হয়নি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) শামীম আকনজি বলেন, ‘মেয়ের পরিবার থেকে একটি অভিযোগ করা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দেখে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে আতাউর রহমানকে তারা রাস্তায় আটক করে গুরুত্বর আহত করে হুমায়ুন। বরিবার আতাউরের পরিবার এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ হুমায়ুনকে আটক করে সোমবার জেল হাজতে পাঠায়।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

৩৫ কেজি বাঘাইড় মাছ ও ১৫ কেজি মিষ্টিতে পোড়াদহ মেলা

Verified by MonsterInsights

কমলগঞ্জে বখাটে কর্তৃক তরুণীকে অপহরন চেষ্টা; প্রতিরোধে বখাটে আহত

আপডেট সময় ০৯:০৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২০ জানুয়ারী ২০২৫

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে স্কুল পড়ুয়া তরুণীকে উত্যক্ত করার অপরাধে গ্রাম্য শালিসের পূর্বদিন বাড়ি থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় অপহরণ করতে এসে পরিবারের সদস্যদের প্রতিরোধে গুরুত্বর আহত হয়েছে বখাটে আতাউর রহমান (২৭)। আহত বখাটে আতাউর এখন সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদিকে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ তরুণীর পিতা হুমায়ুনকে ফোনে ডেকে এনে উল্টো বখাটেকে আহত করার অপরাধে আটক করে মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার (১৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায়।

উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের স্কুল ছাত্রীর বাবা হুমায়ুন মিয়া অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে রিয়া আক্তার কালীপ্রসাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী। একই গ্রামের হুমায়ুনের ভাই হারুন মিয়ার ছেলে রাজমিস্ত্রী আতাউর রহমান (৩০) পূর্বে ২টি বিয়ে করেছে এবং তাদেরকে নির্যাতন করে তালাক দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তার মেয়েকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে উত্তক্ত করে। মেয়েটি বিবাহিত চাচাতো ভাইয়ের প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের অবহিত করে। মেয়েকে উত্যক্ত করার বিষয়টি তার পরিবারের সদস্যরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কমলগঞ্জ থানায় লিখিতভাবে অবহিত করে। এর প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে ২০ জানুয়ারি সকালে এলাকায় শালিস বৈঠক বসার সিদ্ধান্ত হয়।

এদিকে বখাটে আতাউর ১৯ জানুয়ারি ভোরে মোটরসাইকেলযোগে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তার অপর সঙ্গীদের সাথে নিয়ে তরুণীকে অপহরণ করতে হুমায়ুনের বাড়িতে যায়। এ সময় হুমায়ুন ও তার পরিবারের লোকজন আতাউর ও তার সঙ্গীদের দেশীয় অস্ত্র দিয়ে প্রতিরোধ করে। তাদের প্রতিরোধে আতাউরের মোটরসাইকেল ভাংচুর করে ও আতাউরের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুতর আহত করে। হামলায় আতাউর গুরুতর আহত হলে তার আত্নীয়স্বজন তাকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করে।

স্কুল ছাত্রী রিয়ার মা বলেন, ‘ঘটনার রাতে তার স্বামী মুন্সিবাজার অবস্থান করার সময় কমলগঞ্জ থানা থেকে তাকে ফোন করে বিষয়টি সম্পর্কে জানার জন্য ডেকে নিয়ে আতাউরের উপর হামলার কারণে আটক করে পরদিন মৌলভীবাজার জেল হাজতে প্রেরণ করেছে।

অপরদিকে সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুরে একদল সাংবাদিক সরজমিনে পরিদর্শন করতে গেলে এলাকার দিলারা বেগম, নানু মিয়া, লতিফ মিয়া ও লাল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, ‘আতাউর পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল। সে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির লাঠিয়াল হিসাবে তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছে। তার ভয়ে এলাকার কেউ কথা বলতে পারে না।

তারা আরো বলেন, ‘সে আগে বৃন্দাবনপুর ও রামেশ্রপুর গ্রামে ২টি বিয়ে করেছিল। তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তারা তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এছাড়া তার অত্যাচারে মইনউদ্দিনের পরিবার বাড়ি-ঘর ফেলে রেখে বর্তমানে গিয়াসনগর এলাকায় বসবাস করছে।

তারা বলেন, গত বছর শালিস চলাকালীন সময় তার বিরুদ্ধে কথা বলায় শালিসান ফটিক মিয়াকে বৈঠক স্থলেই চাকু দিয়ে আঘাত করে আহত করে। বর্তমানে সে বিএনপি নেতাদের আশ্রয়ে চলে গেছে। তাদের প্রশ্রয় আবারো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেছে। হুমায়ুনের স্কুল পড়ুয়া মেয়েকে স্কুলে যাওয়া-আসার সময় বিরক্ত করার অভিযোগে ২০ জানুয়ারি এলাকায় শালিস বৈঠক করার কথা ছিল, কিন্তুু তার আগেই সন্ত্রাসী নিয়ে তার মেয়েকে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করলে হুমায়ুন ও তার পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে আহত করেছে।

এদিকে আতাউরের সাথে এ বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য মুঠোফোনে ফোন করলে তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ওয়াতির আলী বলেন, আতাউর খুব খারাপ লোক। এলাকায় যত অন্যায় অপকর্ম আছে সবগুলোর সাথে সে জড়িত। তার নেতৃত্বে সব ধরনের কাজ এ এলাকায় হয়। আমরা বিচারি হয়েও তার বিচার করতে পারি না। সে আগে যুবলীগ করতো এখন বিএনপি করে। আমরা চাই পুলিশের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখুক।

তবে তিনি বলেন, আইন হাতে নেওয়া ঠিক হয়নি হুমায়ুনের। তাদের আতাউরকে মারা ঠিক হয়নি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) শামীম আকনজি বলেন, ‘মেয়ের পরিবার থেকে একটি অভিযোগ করা হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দেখে দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। অপরদিকে আতাউর রহমানকে তারা রাস্তায় আটক করে গুরুত্বর আহত করে হুমায়ুন। বরিবার আতাউরের পরিবার এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ হুমায়ুনকে আটক করে সোমবার জেল হাজতে পাঠায়।