ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একান্ত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল যুক্তরাষ্ট্রে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে এই সাক্ষাৎ হতে পারে বলে অনেকের ধারণা ছিল। তবে এ নিয়ে হতাশাজনক খবর প্রকাশ করেছে হিন্দুস্তান টাইমস, লাইভ মিন্টসহ একাধিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি ও সূত্রের বরাত দিয়ে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, চলতি মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাইডলাইনে ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বৈঠকের জন্য আনুষ্ঠানিক অনুরোধ করা হয়েছিল। কিন্তু ড. ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি দেখা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমটির দাবি, সাম্প্রতিক একটি সাক্ষাৎকারে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে ড. ইউনূসের মন্তব্য এবং ঢাকার অন্তর্র্বতী সরকারের সদস্যদের প্রায় প্রতিদিনের মন্তব্যে ভারতের সমালোচনা নয়াদিল্লির ভালো লাগেনি।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস ভারতে নির্বাসনে থাকাকালীন বাংলাদেশের বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেন। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, বাংলাদেশ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইতে পারে। তিনি আরও বলেছিলেন, হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ব্যতীত অন্য সকল রাজনৈতিক দলই “ইসলামপন্থি”, এমন বয়ানের বাইরে যাওয়া উচিত ভারতের।
অবশ্য নয়াদিল্লি বলেছে, হাসিনাকে স্বল্প সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। হাসিনা ভারতে অজ্ঞাত স্থানে রয়েছেন। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনার প্রত্যর্পণের নিয়ে সম্ভাব্য বাংলাদেশি অনুরোধের বিষয়েও কথা বলতে অস্বীকার করেছে।
অবশ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, অন্তর্র্বতী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আপাতত বৈঠক করতে চাচ্ছেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাদের মতে, এখন যদি ড. ইউনূসের সঙ্গে মোদিকে সরাসরি বৈঠক করতে হয় তাহলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপারেও আলোচনা করতে হবে। আর মোদি এখন হাসিনাকে নিয়ে কথা বলতে চাইছেন না। কারণ আলোচনা হলে সেখানে অবশ্যই হাসিনাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়টি উঠবে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেছেন, “ঢাকার সঙ্গে দিল্লির সম্পর্ক খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এখন বাংলাদেশের অন্তর্র্বতী সরকারের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ে কথা বললে ভারতকে এমন কিছু বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। যেটি তারা এখন আলোচনায় রাখতে চাইবে না।”
তিনি আরও বলেছেন, “এরমধ্যে প্রধান বিষয় হলো ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান। বাংলাদেশ শেখ হাসিনাকে ফেরত চায়। কিন্তু শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের কিছু নেতার গভীর সম্পর্ক থাকার বিষয়টি বিবেচনা করে তারা তাকে ফেরত দিতে চায় না।”
তিনি বলেন, “যদি মোদিকে এখন ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়, তাহলে এ বিষয়গুলো আলোচনা না করে থাকতে পারবেন না তিনি।”
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণবিপ্লবের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে চলে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা করে অন্তর্র্বতী সরকার গঠন করা হয়।