টিউমার কি?
কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধিই হলো টিউমার। বিস্তারিতভাবে বলা যায়, শরীরের যেকোনো স্থানের কোষসমূহ ধীরে ধীরে বা দ্রুততার সাথে অসামঞ্জস্যভাবে বেড়ে ওঠাই টিউমার। এটি মূলত অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো লাগাম ছাড়া অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সৃষ্টি করে একটি গোল্লা আকৃতির উঁচু ঢিপি/পিণ্ড।
মানুষের শরীরে বিলিয়ন নয়, বরং ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন কোষ রয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্কের দেহে গড়ে ৩০ ট্রিলিয়নের মতো কোষ থাকে। জন্মের সময় এই সংখ্যা চার শতাংশের এক শতাংশ হয়ে থাকে। এরপর কোষের ভেতর কিছু নিয়মে পুরনো কোষ মরে যায়, নতুন কোষ জন্ম নেয়।
আবার কিছু কোষ সাইজে বৃদ্ধি পায়, কিছু কোষ সংখ্যায় বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কোন কোষ কতটুকু বৃদ্ধি পাবে আবার কতটুকু ছোট হবে, শরীরের কতটুকু কোষ মরে যাবে এবং কতটুকু নতুনভাবে জন্ম নিবে এটা মূলত কোষের ভেতরের কিছু নির্দেশনা বা নিয়মের উপর ভিত্তি করে প্রবাহমান। যখনই এর অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, অর্থাৎ এই নিয়ম ভঙ্গ হয্ তখনই মূলত কোনো একটি জায়গায় অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ ঘটে। ফলে সৃষ্টি হয় টিউমার।
টিউমার চেনার উপায় কি?
টিউমার চেনতে হলে টিউমারের বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে জানতে হবে। তাই এ পর্যায়ে আমরা বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট্য এবং ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৈশিষ্ট্যসমূহ সম্পর্কে অবগত করবো আপনাদেরকে।
বিনাইন টিউমারের বৈশিষ্ট:
১. একটি মাত্র আবরণ দ্বারা এ টিউমারটি আবৃত থাকে।
২. এটি শরীরের অন্য কোনো স্থানে ছড়ায় না।
৩. এটি ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।
৪. অপারেশন করালে ঠিক হয়ে যায়। সাধারণত আর বাড়ে না।
ম্যালিগনেন্ট টিউমার বা ক্যান্সারের বৈশিষ্ট্য:
১. এই টিউমারগুলো কোনো আবরণ দ্বারা আবৃত থাকে না। যার ফলে তা অনিয়ন্ত্রিত ও অগোছালোভাবে বৃদ্ধি পায়।
২. এটি খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং বড় হয়ে যায়।
৩. অগোছালোভাবে বৃদ্ধি হওয়ার কারণে শরীরে বিভিন্ন জায়গায় সংক্রমণ ঘটায়।
৪. শরীরের অন্যান্য স্থানে রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে।
৫. এই ধরনের টিউমারগুলো মূলত প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করালে ভালো হয়ে যায়। তবে পুনরায় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েই যায়। তাই দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসা নিতে হয়।
টিউমার সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য:
১. শরীরের প্রয়োজন ছাড়া, নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোষ ভাগ হলে টিউমার তৈরি হয়।
২. টিউমার দ্রুত বাড়তে থাকলে, আকারে অস্বাভাবিক হলে, আকৃতি বা রং বদলাতে শুরু করলে, গায়ে অস্বাভাবিক পিণ্ড তৈরি হলে এটি ক্যান্সারে পরিণত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
৩. টিউমার বা ক্যান্সার হওয়া মানেই সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যু নয়।
যেমনটা ব্রেস্ট টিউমার কিংবা ব্রেস্ট ক্যান্সার, দু’টো একই নয়। টিউমার হলো কিছু অস্বাভাবিক টিস্যুর সমাবেশ, যেখানে কোষগুলো অস্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সংখ্যা বৃদ্ধি করে।
টিউমারের কয়েকটি প্রধান ঔষধ হলো:
Bacillinum Burnett, Lycopodium, Thoja, Conium, Baryta Carb, Baryta Iod, Baryta Mur, Calcarea Carb, Calcarea Phos, Calcarea Floor, Calcarea Iod, Ruta, Phytolacca, Silicea, Arnica Montana.
শরীরের বিভিন্ন স্থানে টিউমারের চিকিৎসা/ ওষুধের নাম নিম্নে দেয়া হলো:
চোখের পাতায় টিউমার: Pulsatilla, Calcarea Floor, Thoja. Staphysagria.
নাকে টিউমার: Thoja, nat.Mur, Teucrium Marum Verum.
স্বরযন্ত্রের টিউমার: Thoja, Bacillinum
কানে টিউমার: Heper Sul, Calcarea Carb, Thoja.
মাথায় টিউমার: Baryra Carb, Calcarea Carb, Calcarea Floor, Thoja, Baryta Carb.
গলায় টিউমার: Heper sul, Baryta Carb, Thoja.
পেটে টিউমার: Calcarea Iod, Thoja.
কাঁধে বা পিঠে টিউমার: Conium, Baryta Carb.
কপালে টিউমার: Conium, Calcarea Floor.
আঘাতের কারনে টিউমার: Conium, Ruta.
দাতের মাড়িতে টিউমার: Hecla Lava.
হাতের কব্জির টিউমার: Ruta, Calcarea Phos.
হাটুতে টিউমার: Calcaria Carb,Calcarea Floor, Calcarea Phos.
আঙ্গুলে টিউমার: Calcarea Floor, Thoja.
মুখের উপর টিউমার: Calcarea Floor, Thoja.
মুখের ভিতর টিউমার: Arum Mur, Baryta Carb, Thoja.
অস্থি/হাড়ের টিউমার: Calcarea Phos, Calcarea Floor, Silicea.
ব্রেন টিউমার: Sulpher, Acid Hydro, Tuber Bovi, Natrum Mur.
জিহ্বার টিউমার: Costcum, Thoja, Arum Mur, Baryta Carb.
স্তনে টিউমার: Phytolacca, Conium, Carbo Ani, Calcarea Floor.
ডিম্বকোষে/ওভারিতে টিউমার: Sepia, Thoja, Calcarea Floor.
জরায়ুর টিউমার: Conium, Arum Mur Nat., Calcarea Iod, Conium, Thoja.
গর্ভভ্রমে টিউমার: Pilsitilla,Natrum Carb, Thoja
নবজাত শিশুর মাথায় টিউমার: Calcaria Carb, Baryta Carb.
মুত্র পথে টিউমার: Sepia, Conium,Thoja, Eucaliptus.
বুকে টিউমার: Calcaria Floor,Thyroidinum.
উরুর মধ্যে বেদনাযুক্ত টিউমার: Conium, Thuja
রক্তময় টিউমার: Calcarea Floor.
বগলের টিউমার: Lyco, Carbo Ani, Thoja
ফুসফুসে টিউমার: Thoja, Phosphorus, Bacillinum
ঠোটের টিউমার: Costicum,Thoja, Silicea, Calcarea Phos.
রক্তবহা নাড়ির টিউমার: Medorinum, Calcarea Floor.
Thoja Mother Tincture and Phytolacca Mother Tincture বাহ্য প্রয়োগ করা যায়।
শক্ত টিউমারে Thuja, Conium, Ruta, Calcarea Floor, Calcarea Phos. Carbo Ani.
নরম টিউমারে Natrum Mur, Calcarea Carb, Thoja, Baryta Carb.
হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা লক্ষণভিত্তিক এবং বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা, রোগীর লক্ষন অনুযায়ী উল্লখিত ঔষধ ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
বিঃ দ্রঃ হোমিওপ্যাথিক রেজিস্টার ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা যাবে না।