বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, যত দ্রুত জাতীয় নির্বাচন করা হবে, ততই দেশের জন্য মঙ্গল।
সংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে সর্বপ্রথম শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানই সংস্কার করেছিলেন। তিনি একদলীয় বাকশাল শাসন কায়েম থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন।
মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর টাউন হল ময়দানে যশোর জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন।
নিত্য প্রয়োজনীয় মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা, অবনতিশীল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, দ্রুত গণতান্ত্রিক যাত্রা পথে উত্তোরণের জন্য নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা এবং রাষ্ট্রে পতিত ফ্যাসিবাদের নানা চক্রান্তের অপচেষ্টা মোকাবেলাসহ বিভিন্ন জনদাবীতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম।
নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, বিএনপির সহ-ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপু, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক জাহানারা সিদ্দিকী, সাবেক দপ্তর সম্পাদক মধুকুল হাসান তৃপ্তি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট সৈয়দ সাবরুল হক সাবু, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার টি এস আইয়ুব, কেশবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবুল হোসেন আজাদ, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ফিরোজা বুলবুল কলি, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা নাজমুল মুন্নি, যশোর চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি ও বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান খান, সাবেক মেয়র মারুফুল ইসলাম, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চান, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনজারুল হক খোকন, চৌগাছা পৌর বিএনপি’র আহবায়ক সেলিম রেজা আউলিয়ার, অভয়নগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফারাজি মতিয়ার রহমান, মনিরামপুর থানা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শহীদ ইকবাল, শার্শা উপজেলা বিএনপির সভাপতি হাসান জহির, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান, এম তমাল আহমেদ, আনসারুল হক রানা, রাশিদা রহমান, মোস্তফা আমির ফয়সাল, মাসুদ কাদের প্রমূখ।
সমাবেশে প্রধান অতিথি তার বক্তৃতায় আরও বলেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপির ৬০ লাখ নেতাকর্মীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। যশোরে হত্যা করেছিল ৮৪ জনকে। সারাদেশে ৭ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছিল। মিটিং মিছিলে ১৪৪ ধারা জারি করে জনগণের কথা বলার অধিকারকে কেড়ে নিয়েছিল। সর্বশেষ জুলাই আগস্টে নিরীহ ২০০০ ছাত্রছাত্রী হত্যা করেছিল। তাদের নৃশংসতা থেকে শিশুরাও রেহাই পায় নাই। তারেক রহমানের নামেও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি, জুলুম, নির্যাতন করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমাদের আশা, অতি দ্রুত দেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে নিয়ে আসা। ফলে সংস্কারের কথা বলে নির্বাচনকে পেছানো যাবে না। একইসাথে তিনি বর্তমান সরকারকে সুশাসনের দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান।

প্রধান অতিথি বলেন, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকার বিএনপিকে ভাঙার জন্য গত ১৫-১৬ বছর শত চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম এবং দলের প্রতি ভালোবাসায় তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্ব বাংলাদেশের মানুষের কাছে একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
প্রধান অতিথি তার বক্তৃতার শুরুতে যশোরে উন্নয়নের কারিগর সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের কথা স্মরণ করে বলেন, এই যশোর তরিকুল ইসলামের শহর। তিনি এই শহরের ব্যাপক উন্নয়ন ঘটিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজ এখানে দাঁড়িয়ে যদি বলতে পারতাম আমরা সবাই ভালো আছি তাহলে অনেক খুশি হতাম। আপনারা কি সবাই ভাল আছেন? এমন প্রশ্ন করে তিনি বলেন, আজকে চাল, ডাল, চিনি, লবণ প্রত্যেকটি জিনিসের দাম মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
আয়নাঘরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিনা কারণে অসংখ্য নেতাকর্মীকে রাতের অন্ধকারে ধরে নিয়ে আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। বছরের পর বছর সেখানে তারা নিপীড়ন-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেককে মেরে ফেলা হয়েছে। আওয়ামী নির্যাতনের হাত থেকে কেউ রেহাই পাইনি। তারা ভোটাধিকার নষ্ট করেছে। যাদের বয়স আজ ২২ /২৪, তারা কোনো ভোট প্রদান করতে পারেনি।
বিএনপি মহাসচিব মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের কথা উল্লেখ করে বলেন, তারাও সংস্কারের কথা বলে এক দুরভীসন্ধি সৃষ্টি করেছিল। দেশকে সংঘাতের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দেশে যদি পার্লামেন্ট না থাকে তাহলে সংস্কার কিভাবে সম্ভব? জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই তো সংস্কার করবেন। ফলে নির্বাচন হলেই সব সংস্কার দ্রুত করা সম্ভব হবে।
সমাবেশে কোরআন তেলাওয়াত করেন জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা মোশারফ হোসেন।