কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে শুরু হয়ে গেল প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী কুড়িখাই মেলা। আধ্যাত্মিক সাধক শাহ শামসুদ্দিন বুখারি (রহ.) এর ওরস উপলক্ষে প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষে সোমবার শুরু হয়ে সপ্তাহব্যাপী চলে এ মেলা।
মেলাটি জেলার সবচেয়ে বড় গ্রামীণ মেলা হিসেবে পরিচিত। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া, সিলেট, হবিগঞ্জ জেলাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষদের সমাগম হয় এ মেলায়। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে এই মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ৫০ গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে। প্রতিটি বাড়িতেই মেয়ে-জামাই ও স্বজনদের দাওয়াত করা হয়।
জানা গেছে, প্রায় চারশ বছর আগে কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের কুড়িখাই এলাকায় আস্তানা গাড়েন ১২ আউলিয়ার অন্যতম আধ্যাত্মিক সাধক হজরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বুখারি (রহ.)। তার মৃত্যুর পর সেখানে গড়ে ওঠে মাজার। প্রতি বছর হজরত শাহ সামছুদ্দীন আউলিয়া সুলতানুল বোখারী (রহ.) মাজার প্রাঙ্গণে বাৎসরিক ওরস উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মুরিদ ও সাধকরা এখানে জড়ো হন। সেই থেকে মাজার সংলগ্ন খোলা ময়দানে প্রতি বছর বসে কুড়িখাই মেলা। ওরস ঘিরে এমন মেলা ও উৎসব খুব বেশি দেখা যায় না। মেলার মাছের হাটে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় মাছ ওঠে। এসব মাছ চড়া দামে বিক্রি হয়। শত বছরের পুরোনো এ মেলায় ঢল নামে লাখো মানুষের।
এ মেলাকে ঘিরে আশপাশের সমস্ত এলাকায় বছরের প্রধান উৎসব হয়ে ওঠে প্রায় শত বছরের প্রাচীন কুড়িখাই মেলা। মেলাকে কেন্দ্র করে এলাকার পরিবারগুলো আগে থেকেই টাকা জমিয়ে রাখতে থাকে মেলায় খরচ করবে বলে। দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনকে মেলার বিশেষ দাওয়াত দেওয়া হয়। চারদিক থেকে এলাকার ছেলে-বুড়ো থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষের সপ্তাহব্যাপী দীর্ঘ লাইন থাকে মেলার দিকে। এই মেলায় সবচেয়ে বড় আকর্ষণ মাছের হাট। মেলায় বিশাল এলাকাজুড়ে বসে মাছের হাট। এই হাটে বোয়াল, চিতল, আইড়, রুই, কাতল, সিলভার কার্প, পাঙ্গাস, মাগুর, বাঘাইড়সহ নানা ধরণের অন্তত চার শতাধিক মাছের দোকান বসে।
স্থানীয়দের একটা ভ্রান্ত বিশ্বাস, মেলার বোয়াল মাছ খেলে এ বছরের জন্য বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। তাই বোয়াল মাছের দিকে সাধারণ মানুষের চোখ থাকে বেশি। তবে শুধু বোয়াল নয়, সব ধরনের বড় মাছই মেলায় পাওয়া যায়। মূলত দাওয়াতি জামাইরাই এসব মাছের মূল ক্রেতা। তারা শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে খুশি করতে বড় মাছ কেনেন।
মাছ বিক্রেতারা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা সুনামগঞ্জের হাওর ও নদী থেকে এক সপ্তাহ পূর্ব থেকে এসব মাছ সংগ্রহ করে মেলায় বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধর্নাঢ্য ব্যক্তিসহ সর্বস্তরের লোকজন এই মেলা থেকে মাছ কিনে নিয়ে যান। এছাড়া মেলায় হাজারো দর্শক আসেন মাছ দেখতে। মেলার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে প্রতি বাড়িতে মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াতের রীতি রয়েছে।
মাছ বিক্রেতা আলী আহমেদ বলেন, ‘আমি ২৫ কেজি ওজনের কাতল মাছ ১৮০০ শত টাকা কেজি দাম চাচ্ছি, ১২০০ টাকা দাম হাঁকায় ক্রেতা। ক্রেতা কম আসছে তাই চিন্তার মধ্যে আছি৷ হয়তো আগামী তিনদিন বিক্রি বাড়বে।
মাছ কিনতে আসা এলাকার জামাই ফারুক বলেন, মেলায় মাছের দাম অনেক বেশি। ২৫ হাজার টাকার একটি রুই মাছ কিনেছি শ্বশুর বাড়িতে নিবার জন্য।
মেলা কমিটির সভাপতি কটিয়াদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মাইদুল ইসলাম বলেন, যুগ যুগ ধরে মেলাটি ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। মেলার পরিবেশ ঠিক রাখতে যা যা করণীয় সবকিছুর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।