ঢাকা ০৯:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৩ মার্চ ২০২৫, ৯ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই মাত্র পাওয়াঃ
ছোট ভাইয়ের লাশ দেখতে এসে বড় বোনের মৃত্যু শ্রীমঙ্গল উপজেলা, পৌর ও সদর ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে ইফতার ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত বেনাপোলে দরিদ্র ও পথচারীদের ইফতার বিতরণ মিষ্টি কুমড়া চাষ করে লোকসান, ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত কৃষক ফিলিস্তিনে নির্বিচারে হত্যার প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানববন্ধন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অর্জিত জ্ঞান শিক্ষাজীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশঃ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইফতার সামগ্রী বিতরণ করল এপেক্স ক্লাব অব লামা কমলগঞ্জে যুবদলের ইফতার বিতরণ মৌলভীবাজারের রাজনগরে ডিবি পুলিশকে মারধর করে চেয়ারম্যাকে ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ টাকার টিকিট বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকায়: প্রশাসনের নীরব ভূমিকা ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদে শ্রীমঙ্গলে বিক্ষোভ মিছিল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের প্রশ্নে হাসনাতের সাথেই আমরা

রায়পুরে ত্রাণের ঢেউটিন ও টাকা বিতরণে অনিয়ম

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ‘মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রাপ্ত ত্রাণের ঢেউটিন ও নগদ টাকা বিতরণে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ ও অসহায় পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত ও পুনঃনির্মাণের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেওয়ার কথা। অথচ অধিকাংশ বরাদ্দই পেয়েছেন পাকা ভবনের মালিক, রাজনৈতিক পরিবার এবং ইউএনও কার্যালয়ের ড্রাইভার, পিয়ন ও তাদের লোকজন।

এর আগে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৪০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। ওই বরাদ্দ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১৬ জনের নামে ২৪ বান্ডিল টিন ও প্রতি বান্ডিলে ৩ হাজার হারে ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দগুলো থেকে ইউএনওর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত কয়েককন ব্যক্তি অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টাকা ও টিনের কয়েকটি বরাদ্দ নিতে সক্ষম হয়। ঘটানাটি ফাঁস হয়ে পড়লে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তালিকার দুই নম্বরে থাকা মনির আহাম্মদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ড্রাইভার রাহাত হোসেনের বাবা। তিনি পেয়েছেন ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। ৫ নম্বরে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী আমেনা বেগমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের আলী খানের বাড়িতে। তাকে রায়পুরের সোনাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। ৬ নম্বরে থাকা রাজিয়া সুলতানার স্বামী মায়েদুল ইসলাম মাদু যুবলীগের স্থানীয় নেতা। তার বসতবাড়িটি পাকা ভবন হলেও তাকে দেওয়া হয়েছে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। টিনগুলো দিয়ে তার স্বামী গরু ঘরের চাল বানিয়েছেন। ৯ নম্বরে রয়েছেন পৌরসভার মধুপুর গ্রামের সামছুন নাহার। তার স্বামী মফিজ উল্যা সদস্য প্রবাস ফেরত। এখনো ৩ ছেলে প্রবাসে রয়েছেন। সুরম্য পাকা ভবনে বসবাস তাদের। তিনি ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার নেননি বলে জানিয়েছেন।

একই কথা জানিয়েছেন তালিকার ১৩ নম্বরে থাকা খোকন চন্দ্র দাসের। তিনিও কোনো টিন বা টাকার কথা জানেন না। অথচ তার নামেই উত্তোলন দেখানো হয়েছে ৫ হাজার টাকা ও ২ বান্ডিল টিন।

অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা মায়েদুল ইসলাম মাদু বলেন, আমার ছেলে রাকিবুল ইসলাম তদবির করে ইউএনও সাহেবের কাছ থেকে টিন ও টাকা বরাদ্দ এনেছেন। বসতঘর পাকা হওয়ায় এগুলো দিয়ে গরু ঘরের চাল মেরামত করেছি।

মধুপুরের বাসিন্দা সামছুন নাহার বলেন, আমার স্বামী সম্প্রতি প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন। তিন ছেলে এখনো প্রবাসেই রয়েছেন। চরমোহনা ইউনিয়ন থেকে মধুপুরে জমি কিনে পাকা ভবন করে আমরা বসবাস করছি। স্থানীয় একজনের মাধ্যমে বন্যার সময় আমার আইডি কার্ডটি নেওয়া হয়। পরে জানতে পারি ওই কার্ডটি দিয়ে ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মোবারক হোসেন ২ বান্ডিল টিন ও টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন।

সমাজকর্মী নাসির আল ইমরান বলেন, দুস্থদের ত্রাণের টিন ও টাকা ইউএনওর কাছের লোকজন হিসেবে পরিচিতদের মাধ্যমে আত্মসাত হওয়ার ঘটনা ফেসবুকে তুলে ধরায় আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা গরীবের হক আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

রায়পুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল হাই খান বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগে বরাদ্দগুলো এসেছে। সাংবাদিকদের নিকট খবর পেয়ে যাচাই করে কয়েকটি অনিয়ম পাওয়া গেছে। এগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, অসহায় ও দুস্থদের মানবিক সহায়তা স্বচ্ছলদের পাওয়ার সুযোগ নেই। কয়েকজনকে বিশ্বাস করে বরাদ্দ দেওয়ায় এমনটি হয়েছে। তালিকায় থাকা কয়েকটি নামের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। স্বচ্ছলদের নাম বাতিল করে ওই টিন ও টাকা উদ্ধার করে অস্বচ্ছলদের দেওয়া হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ছোট ভাইয়ের লাশ দেখতে এসে বড় বোনের মৃত্যু

Verified by MonsterInsights

রায়পুরে ত্রাণের ঢেউটিন ও টাকা বিতরণে অনিয়ম

আপডেট সময় ০৬:০৩:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ‘মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রাপ্ত ত্রাণের ঢেউটিন ও নগদ টাকা বিতরণে অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত, দুস্থ ও অসহায় পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামত ও পুনঃনির্মাণের জন্য এগুলো বরাদ্দ দেওয়ার কথা। অথচ অধিকাংশ বরাদ্দই পেয়েছেন পাকা ভবনের মালিক, রাজনৈতিক পরিবার এবং ইউএনও কার্যালয়ের ড্রাইভার, পিয়ন ও তাদের লোকজন।

এর আগে, গত বছরের ২৩ অক্টোবর জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে ৪০ বান্ডিল ঢেউটিন ও গৃহ নির্মাণের জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। ওই বরাদ্দ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ১৬ জনের নামে ২৪ বান্ডিল টিন ও প্রতি বান্ডিলে ৩ হাজার হারে ৭২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বরাদ্দগুলো থেকে ইউএনওর কাছের লোক হিসেবে পরিচিত কয়েককন ব্যক্তি অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে টাকা ও টিনের কয়েকটি বরাদ্দ নিতে সক্ষম হয়। ঘটানাটি ফাঁস হয়ে পড়লে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, তালিকার দুই নম্বরে থাকা মনির আহাম্মদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের ড্রাইভার রাহাত হোসেনের বাবা। তিনি পেয়েছেন ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। ৫ নম্বরে থাকা শারীরিক প্রতিবন্ধী আমেনা বেগমের বাড়ি লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার ইউনিয়নের মহাদেবপুর গ্রামের আলী খানের বাড়িতে। তাকে রায়পুরের সোনাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা দেখিয়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। ৬ নম্বরে থাকা রাজিয়া সুলতানার স্বামী মায়েদুল ইসলাম মাদু যুবলীগের স্থানীয় নেতা। তার বসতবাড়িটি পাকা ভবন হলেও তাকে দেওয়া হয়েছে ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার টাকা। টিনগুলো দিয়ে তার স্বামী গরু ঘরের চাল বানিয়েছেন। ৯ নম্বরে রয়েছেন পৌরসভার মধুপুর গ্রামের সামছুন নাহার। তার স্বামী মফিজ উল্যা সদস্য প্রবাস ফেরত। এখনো ৩ ছেলে প্রবাসে রয়েছেন। সুরম্য পাকা ভবনে বসবাস তাদের। তিনি ২ বান্ডিল টিন ও ৬ হাজার নেননি বলে জানিয়েছেন।

একই কথা জানিয়েছেন তালিকার ১৩ নম্বরে থাকা খোকন চন্দ্র দাসের। তিনিও কোনো টিন বা টাকার কথা জানেন না। অথচ তার নামেই উত্তোলন দেখানো হয়েছে ৫ হাজার টাকা ও ২ বান্ডিল টিন।

অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা মায়েদুল ইসলাম মাদু বলেন, আমার ছেলে রাকিবুল ইসলাম তদবির করে ইউএনও সাহেবের কাছ থেকে টিন ও টাকা বরাদ্দ এনেছেন। বসতঘর পাকা হওয়ায় এগুলো দিয়ে গরু ঘরের চাল মেরামত করেছি।

মধুপুরের বাসিন্দা সামছুন নাহার বলেন, আমার স্বামী সম্প্রতি প্রবাস থেকে দেশে এসেছেন। তিন ছেলে এখনো প্রবাসেই রয়েছেন। চরমোহনা ইউনিয়ন থেকে মধুপুরে জমি কিনে পাকা ভবন করে আমরা বসবাস করছি। স্থানীয় একজনের মাধ্যমে বন্যার সময় আমার আইডি কার্ডটি নেওয়া হয়। পরে জানতে পারি ওই কার্ডটি দিয়ে ইউএনও অফিসের অফিস সহায়ক মোবারক হোসেন ২ বান্ডিল টিন ও টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন।

সমাজকর্মী নাসির আল ইমরান বলেন, দুস্থদের ত্রাণের টিন ও টাকা ইউএনওর কাছের লোকজন হিসেবে পরিচিতদের মাধ্যমে আত্মসাত হওয়ার ঘটনা ফেসবুকে তুলে ধরায় আমাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা গরীবের হক আত্মসাতকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।

রায়পুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আবদুল হাই খান বলেন, আমি এখানে যোগদানের আগে বরাদ্দগুলো এসেছে। সাংবাদিকদের নিকট খবর পেয়ে যাচাই করে কয়েকটি অনিয়ম পাওয়া গেছে। এগুলো সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইমরান খান বলেন, অসহায় ও দুস্থদের মানবিক সহায়তা স্বচ্ছলদের পাওয়ার সুযোগ নেই। কয়েকজনকে বিশ্বাস করে বরাদ্দ দেওয়ায় এমনটি হয়েছে। তালিকায় থাকা কয়েকটি নামের বিষয়ে অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি যাচাই করা হচ্ছে। স্বচ্ছলদের নাম বাতিল করে ওই টিন ও টাকা উদ্ধার করে অস্বচ্ছলদের দেওয়া হবে।