একটি শিশু জন্মের পর সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য প্রথম বিসিজি বা যক্ষা রোগের টিকা পায়। তারপর ৪৫ দিন বয়স থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পাঁচবারে বিনামূল্যের সরকারি আরো দশটি সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য টিকা পেয়ে থাকে। তবে চারটি টিকা সংকটের কারণে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী একটি ও উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় স্থাপিত আরো ১৯২টি টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে শিশুর অভিভাবকরা শত শত শিশুকে সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয় যে টিকা তার মধ্যে চারটি টিকা দিতে পারছেন না।
আর উপজেলা এলাকার শূণ্য থেকে দুই বছর বয়সী অনেক শিশু বয়স অনুযায়ী টিকা পাওয়ার যোগ্য হলেও বিনামূল্যের সরকারি চারটি টিকা প্রায় এক মাস যাবত না পেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরেছে। পাশাপাশি কবে নাগাদ সংকট কাটিয়ে সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য দেওয়া হয় এমন চারটি টিকা শিশুরা পাবে। এ তথ্যও উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মরত সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)‘র টিকাদানকারী স্বাস্থ্য সহকারি ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানাতে পারছেন না টিকা বঞ্চিত শিশুর মা-বাবাদেরকে। তাই টিকে নিতে এসে টিকা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাচ্ছেন তাঁরা।
টিকা পাওয়ার উপযোগী বয়সের সন্তানদের বাবা-মা বা অভিভাবকরা তাদের শিশুদের সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরী টিকা দিতে না পারায় চিন্তায় আছেন এমনটি জানান, তাড়াশ পৌর এলাকার টিকা পাওয়ার উপযোগী এক শিশুর মা দীপা রানী মাল।
তিনি আরো জানান, আমার সন্তানের মতো অনেক শিশুর অভিভাভকরা টিকা নিতে উপজেলার টিকাদানের স্থায়ী- অস্থায়ী কেন্দ্রে গিয়ে কয়েকটি টিকা না পেয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছেন।
পাশাপাশি ভাদাস মহল্লার মাহি পারভীন জানান, তার সন্তানও চারটি টিকা পাওয়ার উপযোগী হলেও সরবরাহ না থাকায় তাকেও টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি।
তিনি আরও বলেন, মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে যাই। আর সেখানে টিকা নাই জানিয়ে দিয়েছেন টিকাদানকারীরা। তাই টিকা না দিয়ে সন্তান নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছি। আর দুঃচিন্তা করছি সময় মত টিকা না দিলে সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কিনা?
জানা গেছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডব্লিউএইচও ও ইউনিসেফ দেশের শিশুদের প্রয়োজনের অর্ধেক ১০টি সংক্রমণ ব্যাধি থেকে সুরক্ষার জন্য টিকা সরবরাহ করেন। আর অর্ধেক সরকার কিনে থাকেন। কিন্তু গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সমন্বিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)‘র টিকাদানকারীরা টিটি ও আইপিভি টিকা চাহিদা মাফিক সরবাহ পেলেও শূণ্য বয়স থেকে দুই বছর বয়স পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেওয়ার জন্য অন্য চারটি টিকা যেমন- বিসিজি (যক্ষা), পেন্টা (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশিসহ অন্যান্য), ওপিভি (মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা) এবং এসআর (হামও রুবেলা) এর টিকা প্রদান করতে পারছেন না।
এখানেই বিপত্তি দেখা দিয়েছে বলে জানান, তাড়াশ উপজেলা সম্মনিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই)‘র ভারপ্রাপ্ত টেকনিশিয়ান মো. আবুল কালাম আজাদ।
তিনি জানিয়েছেন, তাড়াশ উপজেলায় একটি স্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে সকল কর্ম দিবসে সপ্তাহে গড়ে ৪৫ থেকে ৫০ জন ও ১৯২টি অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রে সপ্তাহের চারদিন (রবি, সোম, বুধ ও বৃহস্পতিবার) গড়ে ৪২০ থেকে ৪৬০ জন শিশুকে টিকা দেওয়া হয়। যার মধ্যে চারটি টিকা না থাকায় গত ডিসেম্বর মাস থেকে তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মূলত, সিরাজগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন অফিস থেকে এ টিকাগুলো উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সহবরাহ করে হয়ে থাকে। কিন্তু টিটি ও আইপিভি টিকা চাহিদা মাফিক সরবাহ পেলেও বিসিজি (যক্ষা), পেন্টা (ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশিসহ অনান্য), ওপিভি (মুখে খাওয়ার পোলিও টিকা) এবং এসআর (হামও রুবেলা) এর টিকা সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাই আমরাও শিশুদের ওই চারটি টিকা দিতে পারছি না।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. মো. নুরুল আমীন তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেন। এ সময় বাংলাদেশ সময়ের পক্ষ থেকে তাড়াশের টিকা সংকট নিয়ে বক্তব্যে নেওয়ার কথা বললে তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জ আমার অফিসে আসেন কথা হবে।
এ প্রসেঙ্গ তাড়াশ উপজেলা ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. এরফান আহমেদ বলেন, চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে প্রয়োজনীয় ওই চারটি টিকা পাওয়া যাবে।