মৌলভীবাজার শহরের প্রধান সড়ক ও অলিগলিতে এখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিক্সা। আর এসব যানবাহনের কারণে জনজীবন এখন অতিষ্ট হয়ে পড়ছে, বাড়ছে যানজট ও বিদ্যুতের লোডশেডিং। আর এগুলোর বেশিরভাগ চালকই অদক্ষ ও কমবয়সী কিশোর। তাদের বেপরোয়া গতিতে চালানোর কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।
শহরে অন্তত ৩ থেকে ৪ হাজারেরও বেশি অবৈধ প্যাডেল চালিত অটোরিক্সা চলছে। শুধু গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরেই শহরে প্রবেশ করেছে অন্তত ২ থেকে ৩ গুণ রিক্সা। জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকেও প্রতিদিন শহরে প্রবেশ করছে অগণিত রিক্সা। অনেক জায়গায় অনুমোদিত পায়েচালিত রিক্সা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে এসব অটোরিক্সার দাপটে। রাতে বাড়ে এসব গাড়ির রাজত্ব।
স্থানীয়রা জানান, মৌলভীবাজার শহরের প্রধান প্রধান সড়কেও বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই বাহন। রাতের বেলা এদের চলাচল বেড়ে যায়। ফলে নিয়ন্ত্রণহীন এই বাহনে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। শুধু তাই নয়, আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিনিয়ত ভয়ঙ্কর আকারে বাড়েই চলছে দুই চাকার ওই বাহনটি। ওই সব গ্যারেজে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ওই রিক্সার ব্যাটারি চার্জ দেয়া হয়।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, এসব গ্যারেজে রাতের বেলা অন্তত ৫ থেকে ৬ ঘন্টা পর্যন্ত চার্য দেয়া হয় প্রতিটি রিক্সা। এসব বাহন ব্যাটারির মাধ্যমে পরিচালিত হয় এবং সেই ব্যাটারি কয়েক ঘণ্টা পর পর চার্জ দিতে হয়। এতে প্রতিদিন উৎপাদিত বিদ্যুতের একটা অংশ চলে যাচ্ছে এই ব্যাটারিচালিত রিক্সার পেটে। সাধারণত একটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালানোর জন্য ১২ ভোল্টের ৪ টি ব্যাটারি প্রয়োজন।
শহরের রিক্সাগুলো সিএনজি অটোরিক্সার সাথে পাল্লা দিয়ে দ্রুত গতিতে সড়কে চলতে গিয়ে কখনো হারাচ্ছে নিয়ন্ত্রণ। চলতি পথে অনেক চালক পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে কৌশলে রিক্সার যে অংশে চার্য দেয়া ব্যাটারি থাকে ওই অংশটুকু চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে রাখে। যাতে বুঝতে না পারে এটি ব্যাটারিচালিত রিক্সা। অনেক সময় ডান-বাম না দেখে কিংবা কোনো ধরণের সিগন্যাল না মেনে একপায়ের উপর ভর করে রিক্সা যত্রতত্র ঘুরাতে গিয়ে উল্টে যায়। সারাদিন শহর ঘুরে রাতের বেলা গ্যারেজে চালকেরা নিয়ে গিয়ে সারারাত সেখানে চার্য দেয়। সকাল বেলা চার্য পূর্ণ হলে চালকরা ফের রিক্সা নিয়ে বের হন।
ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক সুমন মিয়া জানান, শহরে এসব রিক্সা চালানো অবৈধ, তবুও পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চালাই। পায়ে সমস্যা থাকায় প্যাডেল চালিত রিক্সা চালাতে পারি না। এই রিক্সা চালকের দেয়া তথ্য মতে তিনি মাসিক ফির ভিত্তিতে একটি সমিতির অধিনে রিক্সা চালান।
রুবেল মিয়া নামক এক ব্যাটারিচালিত রিক্সাচালক বলেন, আমি আগে রাজমিস্ত্রির কাজ করতাম। টাকা কম তাই এখন অটোরিক্সা চালাই, দিন শেষে ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি সেট ব্যাটারি চার্জের জন্য মাসে বিদ্যুৎ খরচ হয় ৩শ থেকে সর্বোচ্চ ৪শ ইউনিট পর্যন্ত। সেই হিসেবে এক হাজার রিক্সার পেটে চলে যাচ্ছে মাসে প্রায় ৩ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৪ লক্ষ ইউনিট বিদ্যুৎ পর্যন্ত। গড়ে প্রতিটি রিক্সার জন্য মাসে অন্তত ৩ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সব মিলিয়ে এক হাজার রিক্সার জন্য প্রতি মাসে খরচ হচ্ছে ৩ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। তবে যেহেতু গত কয়েক মাসে শহরে রিক্সা বৃদ্ধি পেয়েছে গয়েকগুণ, কাজেই বিদ্যুৎ ব্যবহারের মাত্রাটাও হবে আরও অনেক বেশি।
মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জোনাল কার্যালয়ের জিএম মোহাম্মদ জিয়াউল ইসলাম বলেন, অবৈধ সংযোগ দিয়ে চার্য দেয়ার বিষয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মারিকুল ইসলাম বলেন, আগস্টের পর গত ২ মাসে শহরে ২ থেকে ৩ গুণ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা দেখা মাত্রই আটক করছি। এ পর্যন্ত ৩০ টা আটক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কী পরিমান ব্যাটারিচালিত শহরে চলাচল করছে তার সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।
কী পরিমাণ রিক্সা শহরে চলছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই, তবে সমিতি বলতে পারবে কী পরিমাণ রিক্সা চলাচল করছে।
জানতে চাইলে মৌলভীবাজার পৌরসভার প্রশাসক মল্লিকা দে জানান, ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সা চলাচলের বিষয়টি নিয়ে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, যানজট নিরসনসহ ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সার বিষয়ে পৌরসভাসহ সবার সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এই মাত্র পাওয়াঃ
সংবাদ শিরোনামঃ
ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় ভরে গেছে মৌলভীবাজার, বেড়েছে যানজট ও লোডশেডিং
- মনজু বিজয় চৌধুরী
- আপডেট সময় ১২:১৮:০৭ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৪
- ৬৬ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ