প্রায় চার হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
সরকারি নির্দেশনার অংশ হিসেবে গত ১ অক্টোবর সহকারী সচিব (প্রশাসন) তিরান হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বেবিচকের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব চাওয়া হয়। তাদের স্ত্রী-সন্তানদেরও সম্পদের হিসাব দিতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে।
এই চিঠি ইস্যুর পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে দেখা দিয়েছে আতঙ্ক আর অস্থিরতা। অনেকে বলছেন, বিগত সময়ে যারা নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় বানিয়েছেন তারা বিপদে পড়তে পারেন।
বেবিচকের সদস্য (এটিএম) এয়ার কমোডর জিয়াউল হক বাংলাদেশ সময়কে বলেন, ‘এটি খুবই মহৎ উদ্যোগ। এ উদ্যোগের ফলে দেশের সরকারি, আধাসরকারি এমনকি স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে। যারা অসৎ ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, সেটি যেই প্রতিষ্ঠানেরই হোক তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানের যদি এ রকম থাকে তবে তার ক্ষেত্রে একই পরিস্থিতি হবে। যারা অসৎ শুধু তাদের মধ্যেই অস্থিরতা থাকবে, বাকিদের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হবে না।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত ২২ সেপ্টেম্বর সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব চেয়ে চিঠি ইস্যু করা হয়। পরে বেবিচক গত ১ অক্টোবর ৪৩টি শাখায় এই চিঠি পাঠায়। চিঠি ইস্যুর পরই মূলত শুরু হয় অস্থিরতা। বিভিন্ন দ্বায়িত্বে থেকে যারা নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি করে টাকা কামিয়েছেন তারা বিপদে পড়তে যাচ্ছেন বলে শুরু হয়েছে আলোচনা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা বাংলাদেশ সময়কে বলেন, ‘বিগত আওয়ামী লীগের সময় বেবিচক ঘিরে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট সক্রিয় ছিল। এই সিন্ডিকেটগুলো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো। কিছু কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী গত ১৫ বছর আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। চিঠি ইস্যুর পর তারাই মূলত আতঙ্কের মধ্যে আছে। অনেকে সম্পদ লুকানোর চেষ্টা করছে বলে তারাও জানান।’
বেবিচকের প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্ট্যাটাস অনুযায়ী যদি তাদের সম্পদের বিবরণীতে কোনো ধরনের সন্দেহ দেখা যায় তবে সেটি বিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনা হবে। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমেও সেটি তদন্তের জন্য পাঠানো হবে। কর্মীদের স্ত্রী বা স্বামী ও সন্তানদের সম্পদের হিসাবও জমা দিতে হবে। সুতরাং, এখানে কিছু গোপন করার বিষয় থাকবে না। আগে প্রতি বছর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হতো। সেখানে স্ত্রী বা সন্তানদের আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়ার বিষয় থাকতো না। এক্ষেত্রে অনেকে স্ত্রী-সন্তানদের নামেও সম্পদ করতো।
এবারে চিঠিতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্যদের সম্পদের হিসাব দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এজন্য নির্দিষ্ট ফরমও সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এজন্য দুর্নীতির মাধ্যমে যে সব কর্মকর্তা নিজেদের নামে সম্পদ না করে স্ত্রী-সন্তানদের নামে করেছেন সেটিও উন্মোচন হয়ে যাবে।
বেবিচকের জনসংযোগ কর্মকর্তা কাওসার মাহমুদ বাংলাদেশ সময়কে বলেন, বর্তমানে বেবিচকের কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৪ হাজার। সম্পদের হিসাব চেয়ে চিঠি সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। নভেম্বরের ৩০ তারিখের মধ্যে সবাইকে তাদের পরিবারের সদস্যদেরসহ সব সম্পদের হিসাব জমা দিতে হবে।
এই মাত্র পাওয়াঃ
স্ত্রী-সন্তানসহ ৪০০০ কর্মীর সম্পদের হিসাব চেয়েছে বেবিচক, শুরু হয়েছে ‘অস্থিরতা’
- জগলুল কবির নাসির
- আপডেট সময় ০৮:৪৪:৪৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১১ অক্টোবর ২০২৪
- ৫৮৫ বার পড়া হয়েছে
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ