ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির প্রায় ৪ শতাধিক সদস্য সমিতির বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ওয়াসা ভবনে জাতীয়তাবাদী এমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের নিকট অবহিত করেন।
এই বিষয়ে সভাপতি আজিজুল আলম খান এবং সাধারণ সম্পাদক মনির হোসেন পাটোয়ারী সকল অভিযোগ আমলে নিয়ে ভবিষ্যতে দুর্নিতী ও অনিয়মমুক্ত সমবায় সমিতি নতুন কমিটি করে দেয়ার আশ্বাস দেন।
যারা ঐ সকল অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলো তাঁদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য মন্ত্রণালয়সহ ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন বলে আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতির কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যারা বিভিন্ন সময়ে সমিতির সভাপতি ও সমিতির প্রকল্পের শীর্ষ পদে দায়িত্বে ছিলেন তারা আত্মসাৎ করেছেন।
সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির উদ্যোগে ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছিলো। সমিতির ২০১৮-২০২০ অর্থবছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তারা এ তথ্য জানিয়েছিলেন। এ সময় সমবায় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তৈরি নিরীক্ষা প্রতিবেদনের একটি অনুলিপি সাংবাদিকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিলো।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য ও সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সমিতির সম্পাদক শাহাব উদ্দিন সরকার। এ সময় সমিতির সভাপতি মুহাম্মদ আতাউল করিম, সদস্য হুমায়ুন কবির লিটন, নজরুল ইসলাম প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়েছিলো তাকসিন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ২০২০ সালে ১৩২ কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিলো। যারা বিভিন্ন সময়ে সমিতির সভাপতি ও সমিতির প্রকল্পের শীর্ষ পদে দায়িত্বে ছিলেন তারা আত্মসাৎ করেছেন। ঐ সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছিলো।
সমিতির ২০১৮-২০২০ অর্থ বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তারা এই অভিযোগ করেছিলো, ২০০৫ সাল থেকে ঢাকা ওয়াসা কর্মচারী বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেড নামে সমিতির কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে প্রোগ্রাম ফর পারফরমেন্স ইমপ্রুভমেন্ট (পিপিআই) প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা ওয়াসার সাতটি জোনের পানির বিল ও মিটার স্থাপনসহ রাজস্ব আদায়ের কাজ পায় সমিতি।
ওয়াসার আদায়কৃত মোট রাজস্বের ১০ শতাংশ সমিতির একাউন্টে জমা হতো। এ খাত থেকে প্রতি বছর সমিতির শতাধিক কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু যারা বিভিন্ন সময় সমিতি ও পিপিআই প্রকল্পের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন, তারা এই টাকার একটি বড় অংশ আত্মসাৎ করেছেন।
সমবায় অধিদপ্তরের অডিটে দেখা গেছে, আত্মসাৎকৃত সেই টাকার পরিমাণ ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকা। যে সময়ে এই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে সেই সময়ে সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন ওয়াসার সিবিএ নেতা ও ইন্সপেক্টর হাফিজ উদ্দিন, ইন্সপেক্টর মো. শামসুজ্জামান ও বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান।
এ সময়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন ইন্সপেক্টর আতাউর রহমান মিয়া, রাজস্ব পরিদর্শক মো. জাকির হোসেন। আর পিপিআই প্রকল্পের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা ওয়াসার বর্তমান অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আক্তারুজ্জামান ও রাজস্ব পরিদর্শক মিয়া মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এর মধ্যে হাফিজ উদ্দিন ও আতাউর রহমান মারা গেছেন।
অভিযোগ করেন, হাফিজ উদ্দিন ও আক্তারুজ্জামান এই লুটপাটে মূল ভূমিকা পালন করেছেন। যে কারণে হাফিজ উদ্দিনের মৃত্যুর পর আক্তারুজ্জামান ও রাজস্ব পরিদর্শক জাকির হোসেনকে দিয়ে গঠিত কমিটি সমবায় আইনকে পাশ কাটিয়ে দায়িত্ব আকড়ে ধরে রাখতে অনেক কুটকৌশল চালিয়েছে। তারপরও সমবায় অধিদপ্তরের সহযোগিতায় গত বছরের ২৬ অক্টোবর নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কমিটি নির্বাচিত হলেও তাদেরকে কমিটির যাবতীয় হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এক বছর ধরে তারা অফিসটিও দখল করে রেখেছে।
এছাড়া সমিতির পিপিআই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ওয়াসা প্রকল্পের পারফরমেন্স সিকিউরিটির প্রায় ৮ কোটি টাকা, ৬২ হাজার পানির মিটার, চার-পাঁচ মাসের বিলের সার্ভিস চার্জ, ২৪টি প্রাইভেট কার ও লেগুনা, সাতটি জোনের আসবাবপত্রসহ সাকুল্যে ২০০ কোটি টাকার মালামাল আটকে রেখেছে, যার মালিক সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ আরও অভিযোগ করেছিলেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সমবায় অধিদপ্তর ২০২৮-২০ সময়ের অডিট রিপোর্ট প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ ও ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১৩২ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার ৪৬০ টাকার কোনো হিসাব নেই। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ সমিতির তৎকালীন ব্যবস্থাপনা কমিটির নেতৃত্বে থাকা হাফিজ উদ্দিন-আতাউর রহমান পরিষদ, আক্তারুজ্জামান-জাকির হোসেন পরিষদ, পিপিআই পরিচালন পর্ষদের নেতৃত্বে থাকা মো. আক্তারুজ্জামান-জাকির হোসেন পরিষদ ও আক্তারুজ্জামান-মিয়া মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন।