মৌলভীবাজার জেলায় যে শব্দকর জনগোষ্ঠী বসবাস করছে তাদের বক্তব্য, ডিজিটাল যুগে নিত্য নতুন ইলেকট্রনিক যন্ত্র সামগ্রিক তৈরি কারণে দেশীয় যন্ত্রের চাহিদা অনেক কম।
সামাজিক বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানে পুজা বিয়ে দলবেঁধে ঢুলিদের অংশগ্রহণ দেখা যেত। সেখানে আধুনিকতার ছোয়ায় তাদের আর কদর নেই বললেই চলে। এছাড়া পুঁজির অভাবে দেশীয় বাদ্যযন্ত্র এখন বিলুপ্তির পথে। তাই নানাবিধ কারণে বংশানুক্রমিক এই পেশার সাথে নিয়োজিত শিল্পীরা বাদ্যযন্ত্র আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
আবার নিরুপায় হয়ে পেশা পরিবর্তনের কথাও ভাবছেন তাদের অনেকেই। আধুনিক যন্ত্রপাতির আধিক্যে আগের দিনের মত এখন আর এসব বাদ্যযন্ত্রের তেমন চাহিদা নেই। শব্দকর জনগোষ্ঠীরা ২০০৯ সালে বরাবরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে স্মারক প্রদান করা হয়েছিল, কিন্তু এখনও পর্যন্ত তার কোনো প্রতিত্তোর পাওয়া যায়নি।
জানা গেছে মৌলভীবাজারের জেলার মোট ৭টি উপজেলার শব্দকর জনগোষ্ঠী বসবাস রয়েছে। এদের দেখার কেউ নেই। বর্তমানে এই ব্যবসা আমরা যেভাবে ধরে রেখেছি পরবর্তী প্রজন্ম তা করতে পারবে বলে মনে হয় না। পূর্ব পুরুষের পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এবং ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনো চেষ্টা করছেন। কিন্তু দিনবদলের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢাক, ঢোল।
আগে বিয়ে বাড়িতে বায়না করলে যে পরিমাণে টাকা পাওয়া যেত তারা এখন তা পায় না, বরঞ্চ বিভিন্ন জাত পাত ও বর্ণ বৈষম্যের শিকার হতে হয়। ৭-১০ জনের টিম নিয়ে শব্দকাররা অনুষ্ঠানে যাওয়া হয়। মাঘ- ফাল্গুন মাসে একটু ভালো উপার্জন করা যায় দশ থেকে বিশ হাজার টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু মাঘ- ফাল্গুন মাসের শেষ হলে তেমন উপার্জন করা যায় না পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা উপার্জন করা যায়।
শব্দকাররা জানান, ৭০ বছর ধরে এই ব্যবসায় আছি। ৭০ বছর ধরে এই ব্যবসার মাধ্যমেই সংসার চলে। সংসার চালানোর মতো উপায় নেই। এখন এইভাবেই আমাদের চলছে। বাদ্যযন্ত্রই আমাদের সম্বল, বাদ্যবাদের সিজনে আমরা যা উপার্জন করার করি, অন্য সময় আমারা বেকার থাকি। সংগ্রামের পর আমি কাজ শিখেছি, পরে অন্যদেরকেও এই শব্দকরের কাজ শিখিয়েছি। সিজনে ব্যান্ড পার্টি বাজিয়ে আমাদের উপার্জন হয়, কিন্তু অন্যসময় আমাদের অন্য কাজ করতে হয়।
সংসার অচল,কি করে বাঁচবো,কি করে চলবো? বিয়ে বাড়িতে বায়না নিয়ে গেলে পাঁচ হাজার পাওয়া যায়, আবার কারো বাড়িতে বায়না নিয়ে গেলে দুই হাজার-বিশ হাজার পাওয়া যায়।
মৌলভীবাজার জেলার সমাজসেবার উপপরিচালক মো: হাবিবুর রহমান বলেন যে শব্দকর জনগোষ্ঠীরা তাদের বরাদ্দকৃত যা অর্থ আছে তা দিয়ে দেওয়া হয়। শব্দকর জনগোষ্ঠীর জন্য আর কোনো বরাদ্দ নাই। অন্যদিকে চা গোষ্ঠীর এককালীন পাঁচ হাজার টাকা, গৃহ নির্মাণ বরাদ্দ আছে। কিন্তু শব্দকর জনগোষ্ঠীর জন্য এসব বরাদ্দ নেই।