ময়মনসিংহ সদরের চরহরিপুর গ্রামের তালুকদার বাড়ি থেকে উসমান গনির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা কেটে যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে ঐ এলাকার ১৫ পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাড়িতে বিয়ের উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে থাকা সত্ত্বেও রাস্তার কারণে তাদের বিয়ে ভেঙে যাচ্ছে। কেউ বিয়ে দিতে বা করাতে রাজি হচ্ছে না।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সদর উপজেলার ৬ নং চর ঈশ্বরদিয়া ইউনিয়নের চরহরিপুর গ্রামের তালুকদার বাড়ির সামনের চলাচলের সরকারি হালটের প্রায় ২০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থের রাস্তা বন্ধ করা দেওয়ায় ১৫টি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় উসমান গণি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাছে অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগের পর সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলে অভিযুক্ত তালুকদার বাড়ির লোকজন এস্কাবেটর (ভেকু) দিয়ে ১২ থেকে ১৫ ফুল রাস্তা ভরাট করে দেন। বাকি রাস্তা এভাবেই পড়ে আছে। প্রশাসনের কেউ আর খোঁজ নেয়নি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাস্তা বন্ধ করায় বিপাকে পরেছে খেটে খাওয়া ১৫ পরিবার। ওই পরিবারের মানুষগুলো রিকশা ভ্যান নিয়ে বের হতে পারছে না। এমনকি রাস্তা আটকে দেওয়ায় সাইকেল নিয়েও ঢুকতে পারছে না আটকে পড়া পরিবারগুলো। সবজি, মাছ চাষ করে কয়েক পরিবার। পুকুরপাড়ে বা বাড়িতে কোনো গাড়ি ডুকতে না পারায় তা মাথায় করে সড়ক পর্যন্ত এনে বাজারে নিতে হয়। আবার বাজার করে ফেরার পথে মাথায় নিয়ে বাড়িতে ডুকতে হয়। স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের বৃষ্টির দিনে কাঁদা মাড়িয়ে স্কুল কলেজে যেতে হয়। বাড়িতে বিয়ের উপযুক্ত ছেলে-মেয়ে থাকা সত্ত্বেও রাস্তার কারণে পাত্রপক্ষ-পাত্রীপক্ষ বিয়ে ভেঙে দেয়। কেউ বিয়ে দিতে বা করাতে রাজি হয় না। এমন সব বিপদে অসহায় হয়ে পরেছেন পরিবারগুলো।
সদর উপজেলার চরহরিপুর ইউনিয়নের স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী বিপ্লব তালুকদার ও মানিক তালুকদারের ভাইদের বিরুদ্ধে ওই রাস্তা বন্ধের অভিযোগ করেছেন প্রতিবেশী উসমান গনি। রাস্তাটি পুকুরপাড়ে হওয়ায় মাটি ক্রেতা রেজুয়ান, সাত্তার, আব্দুর রাজ্জাক পুকুরের পাড় কেটে মাটি নিয়ে যায়। এদের প্রত্যেকের বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর উপজেলায়।
মফিদুল নামের এক ভুক্তভোগী বলেন, আমরা গরীব মানুষ, আমাদের কথা বলার জায়গা নেই। অটো-ভ্যান চালিয়ে খাই। অনেক হাত-পা ধরেছি, কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। ওরা দাবি করছে রাস্তার জায়গা ওদের। গাছ লাগিয়ে রাস্তা আটকে রেখেছে। মানুষ মরলে লাশ নিয়ে যাওয়ার মতো জায়গা নেই। রাস্তাটি সরকারি হালটের তা তারা মানলেও প্রভাবশালী হওয়ায় রাস্তা দিতে রাজি না।
অবরুদ্ধ এসব পরিবারের সদস্যরা বলেন, এখানের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া দিনমজুর। সবাই শান্তি প্রিয় গরীব মানুষ। যারা রাস্তাটি বন্ধ করেছেন, তারা স্থানীয় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা। হঠাৎ করে তারা তাদের জমি দাবি করে রাস্তাটি দখল করে নেন। এ কারণে চলাচল করতে পারছি না আমরা।
অভিযোগকারী উসমান গণি বলেন, আগে রাস্তা নিচু ছিল। তারাই মাটি দিয়ে উচু করে দিয়েছে। এখন হঠাৎ করে রাস্তা কেটে মাটি বিক্রি করে দেয়। এখন আমরা বাড়ি থেকে বের হবো কীভাবে? তারা অনেক প্রভাবশালী, ক্ষমতাধর। আওয়ামী লীগের আমলে এই এলাকা নিয়ন্ত্রণ করতো তারা। আমার অভিযোগ পেয়ে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা এসে বলে গিয়েছে রাস্তা ঠিক করে দিতে। কিন্তু যেমন রাস্তা তেমনি আছে, কোনো কাজ হচ্ছে না।
অভিযুক্ত বিপ্লব তালুকদার বলেন, সম্পূর্ণ রাস্তাটি হচ্ছে আমাদের জায়গার উপর। এই রাস্তাটি সরকারি হালট তা আমি আগে জানতাম না। সিমানা নিয়ে বিরোধে জমি মাপার পর আমরা জানতে পারি এটা সরকারি রাস্তার হালট। আমাদের পুকুরপাড় ভেঙে গেছে আমরা এখন কি করবো? এটা সরকারি হালট, সরকার করে দিবে। যাতে পরে এ রাস্তা নিয়ে কোনো সমস্যা না হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ময়মনসিংহ সদরের সহকারি কমিশনার (ভূমি) সাইদ মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি। অতি তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিতে এসিল্যান্ডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উনি আমাকে প্রতিবেদন দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।