মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের গদারবাজারে পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাঁধা দেওয়ার ঘটনায় সাবেক ইউপি সদস্য আনার মিয়ার ছেলে কামরুল ইসলাম হৃদয়কে প্রধান আসামি করে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ২৮৫ জনের নামে পুলিশ বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
শ্রীমঙ্গল থানার এসআই অলক বিহারী গুণ এই মামলাটি দায়ের করেন। শ্রীমঙ্গল থানার মামলা নং-৩৫, তারিখ ৩১.০৩.২৫ইং।
শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. আমিনুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার আসামিরা হলো- ১. কামরুল ইসলাম হৃদয় (২১). ২. আনোয়ার মিয়া প্রকাশ (সাবেক মেম্বার আনার মিয়া) (৫৫), ৩. হান্নান মিয়া (৪৫), ৪. মোশাহিদ মিয়া (৩৬), ৫. শরফু মিয়া (৩৫), ৬. মুকিত মিয়া (৫৩), ৭. দেলোয়ার হোসেন কালু (৩৬), ৮. আজিজুর রহমান (৩৫), ৯. তাজুল হক (৩৫), ১০. সৌরভ মিয়া (৩০), ১১. সালামুন মিয়া (২৫), ১২. সাজু মিয়া (২১), ১৩. সাজ্জাদ (২৫), ১৪. সোহান মিয়া (২৪), ১৫. হেলাল মিয়া (৩০), ১৬. সত্তার মিয়া (৩০), ১৭. খালেদুর রহমান (৩৫), ১৮. করিম মিয়া (২৮), ১৯. নজরুল হক (৫০), ২০. আকমল হোসেন রনি (৩০),
২১. জারু মিয়া (৫০), ২২. শাহ আলম মিয়া (৪০), ২৩. রফিকুল (৩০), ২৪. রউফ মিয়া (২৭), ২৫. সজল মিয়া (৩৫), ২৬. শিপন মিয়া (২২), ২৭. আলাল মিয়া (২৫), ২৮. আমান মিয়া (২৫), ২৯. ইমরান মিয়া (২৭), ৩০. জাকির মিয়া (৫০), ৩১. সেলিম মিয়া (৪৫), ৩২. হাসমত মিয়া (৩৫), ৩৩. শাহেন আলী (৩০), ৩৪. এন্তাজুল হক (৩০), ৩৫. সিদ্দিক মিয়া (৩০), ৩৬. আবু রায়হান (৩০), ৩৭. হোসেন আলী (৩০), ৩৮. রাজন মিয়া (২৩) আর অজ্ঞাতনামা ২৮০/২৮৫ জন।
মামলার এজাহারে জানা যায়, শ্রীমঙ্গল থানায় জিডি নং-১৭১৬, হবিগঞ্জ রোডস্থ গদার বাজার পয়েন্টে ‘বিনা লাভের বাজার’ অস্থায়ী দোকানটিতে জেলা বিএনপির নেতা মহসিন মিয়া মধু তাঁর দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়া আকস্মিক পরিদর্শনে যান। এ সময় দোকানের পার্শ্বে টমটম পার্কিং নিয়ে মধু মিয়ার সাথে মামলার ২নং আসামি আনোয়ার মিয়া প্রকাশ আনার মিয়া (সাবেক মেম্বার) এর বাকবিতন্ডা হয়। বাকবিতন্ডার একপর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। পরবর্তীতে অটোরিক্সা (টমটম) চালকেরা পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে গিয়ে মাইকিং করে এলাকার লোকজনদের জড়ো করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মহসিন মিয়া মধুর পক্ষের লোকজনদের ওপর হামলা করার জন্য প্রস্তুতি নেয়।
বিষয়টি জানতে পেরে (৩১ মার্চ) রাত ১২টার সময় সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জসহ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স শ্রীমঙ্গল থানাধীন ৩নং ইউনিয়নের অন্তর্গত পশ্চিম ভাড়াউড়া সাকিনে ‘আমাদের খামার’ নামীয় প্রতিষ্ঠানের সামনে রাস্তায় উপস্থিত হয়ে অটোরিক্সা (টমটম) চালক পক্ষের লোকজনদের নিবৃত করার চেষ্টা করিলে উল্লেখিত আসামিগণসহ ২৮০/২৮৫ জন আসামি বেআইনী জনতাবদ্ধে মিলিত হইয়া হাতে লাঠি সোঠা ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়া পুলিশের সরকারি কর্তব্য কাজে বাঁধা প্রদান করে তাদের ওপর হামলা করে অফিসার ইনচার্জ আমিনুল ইসলামের সরকারী পিকআপ গাড়ির পেছনের লাইট ভাংচুর করিয়া ও ব্যাকডালা দা দিয়া কোপ দিয়া আনুমানিক পঞ্চাশ হাজার ঢাকার ক্ষতিসাধন করে।
মামলার এজহার নামীয় ১নং আসামি তাহার হাতে থাকা লোহার রড দিয়া প্রাণে হত্যার উদ্দেশ্যে কং/৮৬৭ ফয়েজ আহমদের মাথা লক্ষ্য করিয়া আঘাত করিলে উক্ত আঘাত কং/৮৬৭ ফয়েজ আহমদ ডান হাত দিয়া ফিরাইলে ডান হাতের কব্জির নিচে পড়িয়া গুরুতর হাড় ভাঙ্গা জখম হয়। মামলার ২ ও ৩ এবং ৪নং আসামি তাহাদের হাতে থাকা লাঠি সোঠা দিয়া এসআই বাবুল কুমার পালের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নিলাফুলা জখম করে। ৫-৯ নং আসামিদের হাতে থাকা ইট পাটকেল ও লাঠি সোঠা দিয়া এএসআই মো. শরাফত আলীর শরীরে আঘাত করিয়া বিভিন্ন স্থানে মারধর করে নিলাফুলা জখম।
১০-২১ আসামিরা লাঠি সোঠা দিয়া কং/২৬৬ পাপলু দেবনাথ আলীর শরীরের আঘাত করিয়া শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক জখম করে। ২২-৩৮নং আসামিগণ তাদের যাতে থাকা ইট পাটকেল ও লোহার রড দিয়া কং/৫৮৮ ইখতিয়ার হোসেন ও মামলার বাদি এসআই অলক বিহারী গুণ এর শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ফরিয়া নিলাফুলা জখম করে। একপর্যায়ে মামলার আসামিরা পুলিশের বাঁধা উপেক্ষা করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ মিছিল নিয়ে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনার দিকে আসতে থাকে। তখন সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের নেতৃত্বে অফিসার ইনচার্জসহ সঙ্গীয় অফিসার ও ফোর্স বিকল্প পথ ব্যবহার করে শহরের চৌমুহনা মোড়ে এসে অবস্থান নেন।
উল্লেখিত আসামিগণসহ ২৮০/২৮৫ আসামি চৌমুহনাস্থ হবিগঞ্জ রোডে মুখোমুখি অবস্থান নেয় এবং মহসিন মিয়া মধুর পক্ষের লোকজন স্টেশন রোডে মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে একপক্ষ অপর পক্ষকে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করিতে থাকে। একপর্যায়ে জনসাধারণের জানমালের নিরাপত্তা ও সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য কং/৫৮৮ ইখতিয়ার হোসেন তাহার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ৩ রাউন্ড বুলেট, আরআরএফ কং/৬৮৩ পিয়াস বৈদ্য তাহার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ৩ রাউন্ড রাবার বুলেট ৩ রাউন্ড শিষা বুলেট, কং/৬১৪ মন্টু রঞ্জন দাস তার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ৫ রাউন্ড শিষা বুলেট, কং/২৬৬ পাপলু দেবনাথ তাহার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ১১ রাউন্ড রাবার বুলেট ১০ রাউন্ড শিষা বুলেট, কং/৪০২ মাহমুদুল তাওহীদ তাহার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ৪ রাউন্ড শিষা বুলেট, কং/৩৯৪ সুমন মিয়া তাহার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ১ রাউন্ড রাবার বুলেট ২ রাউন্ড শিষা বুলেট, কং/২৮৩ রানা মাহমুদ তাহার নামীয় ইস্যুকৃত শর্টগান হইতে ১ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ২ রাউন্ড শিষা বুলেট, সর্বমোট ২৬ রাউন্ড শিষা কার্তুজ ও ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ফাঁকা ফায়ার করে উভয় পক্ষ নিবৃত করার চেষ্টা করা হয়।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসলাম উদ্দিনসহ সেনাবাহিনীর টহল টিম ঘটনাস্থলে উপস্থিত হইলে যৌথভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। ঘটনার পর এসআই বাবলু কুমার পাল, এএসআই মো. শরাফত আলী, কং/২৬৬ পাপলু দেবনাথ, কং/৫০ ইখতিয়ার হোসেন ও কং/৮৬৭ ফয়েজ আহমদকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
মামলার উল্লেখিত আসামি কামরুল হাসান হৃদয়কে (২১) অভিযান পরিচালনাকালে সেনাবাহিনী কর্তৃক পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রাম হইতে রাত অনুমান আড়াইটার সময় গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিকে ধৃত করা কালে ধস্তাধস্তিতে জখম প্রাপ্ত হইলে তাহাকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হইতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করা হয়। উল্লেখিত আসামিগণসহ অজ্ঞাতনামা ২৮০/২৮৫ জন আসামি বেআইনী জনতাবদ্ধে মিলি হইয়া পুলিশের সরকারী কাজে বাঁধা প্রদান সহ হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করিয়া সাধারণ ও গুরুত্বর জখম ক্ষতিসাধন করিয়া পেনাল কোড ১৪৩/১৮৬/৩৩২/৩৩৩/৩২৩/৩০৭/৪২৭ ধারার অপরাধ করিয়াছে।
উল্লেখ্য যে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ‘বিনা লাভের বাজার’ পাশে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাখাকে কেন্দ্র করে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র মো. মহসিন মিয়া মধু ও সদর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আনার মিয়ার সমর্থকদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতন্ডা হয়। পরে সাবেক মেয়র মহসিন মিয়া ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বাসায় চলে যান। পরে একপর্যায়ে আনার মিয়া নিজ এলাকা পশ্চিমভাড়া গ্রামে মসজিদে মাইকিং করে ৫০০-৬০০ লোকজন জড়ো করে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রসহ শহরের বিভিন্ন সড়কে এবং মধুর মিয়ার বাসায় তান্ডব চালায়। এ সময় ঈদের কেনাকাটা করতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশ বেশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। এ সময় শহরের বিভিন্ন মার্কেটে ঈদের কেনাকাটা করতে আসা লোকজন বিভিন্ন মার্কেটে আটকা পড়েন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় মাকের্টে আটকে পড়া লোকজন বাসা-বাড়িতে ফিরেন।